ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা

‘সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
‘সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়’ ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, এটাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গু বিষয়ে এদেশে সবসময় রিঅ্যাক্টিভ প্লানিং (প্রতিক্রিয়াশীল পরিকল্পনা) করা হয়, কখনো প্রসপেকটিভ প্লানিং (সম্ভাব্য পরিকল্পনা) করা হয় না।

আর রিঅ্যাক্টিভ প্লানিং দিয়ে কোনো সফলতা পাওয়া যায় না, শুধু বাহবা পাওয়া যায়। তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

রোববার (১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।  

আলোচনা সভাটির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. জাফরউল্লাহ চৌধুরী। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন এম এ মুবিন খান।

বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, ডেঙ্গু একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ, এটাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা শুধু স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্ব না। এটা শুধু সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব না। এটা একটি মাল্টিসেক্টরাল অ্যাপ্রোচ। এটা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে করতে হবে। এখনই সময় এসেছে এটাকে নিয়ে ভেবে দেখার। আর এই ভাবনাটা হতে হবে সারা বছরের জন্য। একসময় ছিল শুধু মার্চ- এপ্রিলে ডেঙ্গু আসত। কিন্তু যেসময় ডেঙ্গু আসার কথা না সেটা এখন আসছে। তাই বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে এবং বিপর্যস্ত হতে হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতকে।  

তিনি বলেন, আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে দেখি যে, আমরা সবসময় রিঅ্যাক্টিভ প্ল্যান করি, আমরা কখনো প্রসপেকটিভ প্লানিং করি না। আমাদের দেশে এমন লোক প্রয়োজন যারা দেশের জন্য রিঅ্যাক্টিভ প্লানিং করার আগে প্রসপেকটিভ প্লানিং করবে। যারা চিন্তা করতে পারে আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হবে, আগামী এক বছরে ডেঙ্গুর অবস্থা কেমন হবে, যেখানে কলকাতা পারে সেখানে কেন ঢাকা সিটি করপোরেশন পারবে না। আর রিঅ্যাক্টিভ প্লানিং দিয়ে কখনো সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব না। রিঅ্যাক্টিভ প্লানিং দিয়ে কোনো সফলতা পাওয়া যায় না, শুধু বাহবা পাওয়া যায়।  

অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮৫টি জীবন ঝরে গেছে। মৃত্যু মানে হলো কোনো সন্তানহারা পিতা বা মাতার কান্না। মৃত্যু একটাই হোক বা হাজারটাই হোক আমি মনে করি একটা মৃত্যু হলেই সেটা শতভাগ। যার যায় তারই যায়। এমন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আমরা যে পরিসংখ্যান দেখলাম, গেল ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৯০ হাজার ৭৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হলো ডেঙ্গু নিয়ে আমরা দেখছি করোনার মত বিশ্ব মহামারি যেখানে কন্ট্রোল করা হয়েছে কিন্তু আজকেও ডেঙ্গুকে পরাস্ত করতে পারিনি। আমরা বারবার শুধু ডেঙ্গুর কাছেই হেরে যাচ্ছি। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার।  

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অবস্থা আমাদের থেকে ভয়াবহ ছিল। কলকাতার একজন বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার দেখেছি, তারা কীভাবে ডেঙ্গুকে মোকাবিলা করেছে। আসল কথা হচ্ছে আমরা, এই ব্লেইম কালচার থেকে যতদিন পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত প্রতিবছরই আমাদেরকে ডেঙ্গুর কাছে স্যারেন্ডার করতে হবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা গণনা করতে হবে। আর মানুষের কান্না টেলিভিশনে দেখতে হবে। এখানে কি করা উচিত? আমি মনে করি প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর।

অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণা দরকার। কেন শীতকালে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। এখানে অনেক বিষয় আছে যেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওপর বর্তায়। সামাজিকভাবে এটা ভেবে দেখার দরকার কেন আমরা এটা প্রতিরোধ করতে পারছি না। প্রতিটা মেডিকেল কলেজ এবং শিক্ষার্থীদের এটা নিয়ে সচেতন করতে হবে। মোটকথা ডেঙ্গুর বিষয়ে আগাম প্রতিকার করতে হবে।  

তিনি বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ে অনেক রোগীকে দেখেছি তারা নিজেরাই চিকিৎসা নিয়ে থাকে। সকালে জ্বর হলে সন্ধ্যায় গিয়ে নিজ থেকেই ল্যাবে গিয়ে (এনএসওয়ান) (অ্যান্টিবডি) টেস্ট করে। এখানে বাণিজ্যিক ও কিছু ব্যাপার থাকে বিধায় ল্যাবগুলোও সব টেস্ট করে থাকে। এখানে আমার কাছে মনে হয়, এই নিজ উদ্যোগে এসব করা একটি বড় সমস্যা। কারণ ঘণ্টাখানেকের জ্বরে ডেঙ্গু যখন নেগেটিভ হয় তখন সেই ব্যক্তি মনের সুখে ঘুরতে থাকে। কিন্তু দেখা যায় পরবর্তী প্লাজমা শেষ পর্যায়ে চলে আসে, আর তখন শেষ সময়ে আর কিছু করার থাকে না। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।  

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় বিষয়টি আমি মনে করি, যাদের টাকা আছে তারা হয়ত ভালো হাসপাতালে যান। কিন্তু যাদের টাকা নেই তারা সরকারি হাসপাতালে যান। অনেকে আছে বেশি সমস্যা না হলেও ভর্তি হয়ে থাকেন। এখানে রাষ্ট্রেরও দেখা উচিত কোন লেভেলের রোগীর ভর্তি হওয়া উচিত। আর তৃতীয় বিষয় হচ্ছে ডেথ অডিট রিপোর্ট হওয়া দরকার। একটা রোগী কেন মারা গেল তা নিয়ে অডিট হওয়া দরকার। প্রতিটা রোগীর মৃত্যুতে হাসপাতালগুলোতে ডেথ অডিট হওয়া দরকার। এই সিস্টেম প্রতিটা হাসপাতালে হওয়া দরকার, কেন রোগী মারা গেল। আর এটা সরকারকে প্রতিটি হাসপাতালে ইন্সটলেশন করে দিতে হবে।  

অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির তালুকদার বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে উল্লেখ করা আছে ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। কোন প্রাইমারি রোগের কারণে ডেথ হয়েছে। সেকেন্ডারি কী কারণ ছিল এবং ফাইনাল কোন রোগের কারণে সে মারা গেল। সুখবর হচ্ছে আমাদের দেশে কেবিনেট ডিভিশনে পাশ হওয়ার পর ডেথ সার্টিফিকেট লেখার ফরমেট পরিবর্তন হয়েছে।  

তিনি বলেন, সব মিলিয়ে সকল কিছু সম্মিলিতভাবে যদি আমরা না করতে পারি তাহলে এই ডেঙ্গুকে আমরা পরাস্ত করতে পারব না। তখন ডেঙ্গুর পর জিকা আসবে এর পর অন্যটা আসবে। এর মাধ্যমে আমরা কখনো আলোর পথ দেখতে পারব না।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪
ইএসএস/এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।