ঘুম ঠিক না হলে আমরা মানসিক চাপ, ক্যাফেইন বা মোবাইল স্ক্রিনকে দায়ী করি। কিন্তু জানেন কি, আপনার খাওয়া-দাওয়া বা শরীরে কিছু ভিটামিনের ঘাটতি থাকলেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি হলে ঘুম নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটার সঠিকভাবে কাজ করে না।
ভিটামিন ডি দেহের ঘড়িকে ঠিক রাখে
শুধু হাড় নয়, ভিটামিন ডি ঘুম-জাগরণ চক্র (সার্কাডিয়ান রিদম) ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে ঘুম কম হয়, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, দিনে ঘুম পায় বেশি। এমনকি ঘুমে শ্বাসকষ্ট বা স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। তাই প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকুন, ডিম, মাছ (স্যামন), ফোর্টিফাইড দুধ খান। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিন।
ভিটামিন বি ঘুমের হরমোন বানায়
বি-৬, বি-১২ ও ফোলেট (বি-৯) ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন তৈরিতে সাহায্য করে। এর অভাবে ঘুম কম হয়, রাতে স্বপ্ন বেশি হয়, আর দিনে ঝিমুনি আসে। তাই প্রতিদিন ডাল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, গোটা শস্য খান। আপনি যদি নিরামিষাশী হন, তাহলে বি-১২ সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে।
ভিটামিন সি স্ট্রেস কমায়, ঘুম বাড়ায়
ভিটামিন সি শুধু রোগ প্রতিরোধ নয়, স্ট্রেস কমিয়ে ঘুমের মান বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ভিটামিন সি খান, তাদের ঘুমের সমস্যা কম হয়। কমলালেবুর পাশাপাশি খেতে পারেন মরিচ, স্ট্রবেরি, কিউই, ব্রকলি।
ভিটামিন ই মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে
ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কোষ রক্ষা করে এবং হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে। এর ঘাটতি থাকলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা বাড়তে পারে। বাদাম, বীজ, জলপাই তেল ব্যবহার করুন।
ম্যাগনেসিয়াম ঘুমের খনিজ
যদিও এটা ভিটামিন নয়, তবে ঘুমের জন্য খুবই দরকারী। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত করে, নার্ভ সিস্টেমকে রিল্যাক্স করে। এর অভাবে অনিদ্রা, উদ্বেগ, এবং রাতে পেশির খিঁচুনি হতে পারে। পালং শাক, কুমড়ার বীজ, ডার্ক চকোলেট, গোটা শস্য খাওয়া ভালো। সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যদি নিয়ম মেনে ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঠিকভাবে ঘুম না হয়, তাহলে ভিটামিন ডি, বি-১২, ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এই ঘাটতি দূর হলে ঘুমের সমস্যাও অনেকটাই কমে যেতে পারে। ভালো ঘুমের জন্য শুধু অন্ধকার ঘর আর ভালো বালিশই যথেষ্ট নয়। সঠিক ভিটামিন ও খনিজ শরীরে থাকলে আপনি সহজে ঘুমাবেন, গভীর ঘুম পাবেন, আর সকালে উঠে নিজেকে সতেজ অনুভব করবেন।
এএটি