আগামী দুই বছরে দেশের ১০ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষের চক্ষু পরীক্ষা এবং এক লাখ ছানি অপারেশনের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশে প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত ‘কমপ্রিহেনসিভ ক্যাটারাক্ট সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি উদ্যোগের আওতায় এ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হবে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবন-১-এর মিলনায়তনে এ উদ্যোগটির উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান।
প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের ফাউন্ডেশনস অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক মিজ ক্রিস্টি হুবার্ড।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ হাসান খালেদ। উদ্যোগটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ।
মো. সাইদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, দৃষ্টিশক্তি না থাকলে একজন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ছানি অপারেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলে মানুষ আবার কর্মক্ষম হয়ে উঠে, যা জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
তিনি আরও বলেন, এ উদ্যোগ সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জাতীয় অন্ধত্ব প্রতিরোধ কর্মসূচিকে আরও কার্যকর করবে এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার সুযোগ পাবে।
বিশেষ অতিথি ক্রিস্টি হুবার্ড বলেন, বাংলাদেশে অন্ধত্বের সবচেয়ে বড় কারণ ছানি, অথচ এটি অত্যন্ত সহজে নিরাময়যোগ্য। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল প্রায় চার দশক ধরে ছানি অপারেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষের দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি পিকেএসএফ-এর উদ্ভাবনী উদ্যোগ, নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে পিকেএসএফ-এর উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, পিকেএসএফ সারাদেশে সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পিকেএসএফ স্বাস্থ্য ও জীবিকা-সংক্রান্ত ঝুঁকি প্রশমনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে অনেক সময় সরকারি সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয় না, সেখানে পিকেএসএফ সহযোগী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান রেখেছে। এক লাখ ছানি অপারেশনের এ উদ্যোগ দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, আমরা ২০১২ সাল থেকে এ ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছি। সম্প্রতি, শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ঝুঁকি হ্রাস এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি - এই তিনটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে পিকেএসএফ-এর কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পিকেএসএফ-এর অন্যতম কৌশলগত লক্ষ্য হলো মানুষের টেকসই জীবিকা অর্জন ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি নিরসন। এ উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব হ্রাসে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এ যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে এনে তাদের সামগ্রিক উন্নয়নের পথ সুগম করবে।
প্রকল্পের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ। তিনি জানান, দেশে ৩০ বছর বয়সী ও তদূর্ধ্ব প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ বর্তমানে দৃষ্টিহীন, যাদের প্রায় ৭০ শতাংশ ছানিজনিত কারণে অন্ধ। এদের বড় অংশ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হওয়ায় জাতীয় উৎপাদনশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তিনি বলেন, উদ্যোগটির আওতায় আগামী দুই বছরে এক লাখ ছানি অপারেশন সম্পন্ন করা হবে।
অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়, কমপ্রিহেনসিভ ক্যাটারাক্ট সার্ভিসেস উদ্যোগের আওতায় পিকেএসএফ-এর সহযোগী সংস্থাগুলোর সহায়তায় ৫,০০০ আউটরিচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দশ লাখ রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি অরবিস-এর সহযোগী ২৫টি চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০-এর অধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রাথমিক চক্ষু পরীক্ষা ও রেফারেলের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশের ৫০টি জেলায় সরকার পরিচালিত ২০০টি কমিউনিটি আই সেন্টার এবং অরবিস-এর সহযোগী চক্ষু হাসপাতাল পরিচালিত ১০০টিরও বেশি ভিশন সেন্টার রেফারেল ও ফলো-আপ পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া, অরবিস-এর সহযোগী চক্ষু হাসপাতাল ছানি রোগী বাছাই এবং তাদের ছানি অপারেশন সম্পাদন করবে।
আরকেআর/আরআইএস