ঢাকা: বাংলাদেশে যক্ষ্মা পরিস্থিতির সঠিক পরিসংখ্যান তুলে ধরতে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার ডাক্তারদের সরাসরি সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব যক্ষ্মা রোগী জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন, আমরা কেবল তাদেরই পরিসংখ্যান জানতে পারি।
যক্ষ্মা বিশেজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে, যেখানেই যক্ষ্মা শনাক্ত হোক না কেন সারা দেশে যে কোনো জায়গায় এই রোগের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। তাই প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারদের শনাক্ত করা রোগীদের নিকটস্থ জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতাভুক্ত ডটস সেন্টারগুলোতে রেফার করার প্রক্রিয়া জোরদার করা করলে আরও বেশি রোগীকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। এর ফলে বাংলাদেশে যক্ষ্মা পরিস্থিতির একটি সঠিক চিত্রও পাওয়া যাবে।
নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার ব্র্যাক অফিসে যক্ষ্মার চিকিৎসা নিতে আসা সনিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্র্যাকে চিকিৎসা নেওয়ার আগে সনিয়া প্রাইভেট ডাক্তারদর থেকে চিকিৎসা নেন। কিন্তু প্রাইভেটলি চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয় বলে সেই ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকার মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে সদর অফিসে আসেন।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মো: আকরামুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে ব্র্যাকসহ ৪৩টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারদের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন ধরনের ওরিয়েন্টেশন সভার আয়োজন করছে ব্র্যাক।
পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগযোগ ও রেফারেল ব্যবস্থা জোরদার করার কথা উল্লেখ করেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে চলছে। তবে প্রাইভেট প্যাকটিশনারদের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। যাতে করে প্রাইভেট প্যাকটিশনারদের শনাক্ত করা রোগীদের সরাসরি ডটস-এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) সূত্র জানায়, বর্তমান বাংলাদেশে ডাইরেক্টলি অবজার্ভড ট্রিটমেন্ট শর্টকোর্স (ডটস) পদ্ধতির মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগের সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃতের সংখ্যা ১৯৯০ সালের তুলনায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে ডটস পদ্ধতির মাধ্যমে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বছরে যক্ষ্মা রোগে প্রতি লাখে ২২৫ জন আক্রান্ত হয়। বছরে প্রতি লাখে পুরাতন ও নতুনভাবে আক্রান্ত হয় ৪১১ জন। বছরে যক্ষ্মার কারণে প্রতি লাখে ৪৫ জন লোক মারা যায়।
সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে যক্ষ্মারোগী শনাক্তকরণের হার ছিল ৪১ শতাংশ এবং রোগ নির্ণয়ের হার ছিল শতকরা ৮৪ ভাগ। বর্তমানে যক্ষ্মারোগী শনাক্তকরণের হার শতকরা ৭০ ভাগ।
২০১২ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এক লাখ ৬৪ হাজার সাতশ’ ৬২ জন রোগী শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে। আর চিকিৎসার সফলতার হার শতকরা ৯২ ভাগ। তবে ৩০ শতাংশ রোগী এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর