ঢাকা: চীনের গুয়াংজু মডার্ন ক্যান্সার হাসপাতাল যেন মৃত্যুপুরী। হাসপাতালটির সাব-অফিসের মাধ্যমে একের পর এক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চীনে নেওয়া হচ্ছে।
গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বরের পাশে নাভানা টাওয়ারের নবম তলায় ক্যান্সার হাসপাতালের সাব-অফিস। গুয়াংজু মডার্ন ক্যান্সার হাসপাতালে পাঁচ লাখ টাকায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব বলে প্রাথমিকভাবে বলা হয়। তবে ভর্তি হওয়ার পর ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেলেও নিরাময় হয় না।
প্রতারণার শিকার হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। এছাড়া সাব হাসপাতালটিতে প্রতিদিন চলে থেরাপি নামের প্রতারণা।
বাংলানউজের অনুসন্ধানে গুয়াংজু মডার্ন ক্যান্সার হাসপাতালের সীমাহীন প্রতারণার কথা বেরিয়ে এসেছে।
বিজ্ঞাপন দেখে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে গুলশানের নাভানা টাওয়ারের ৯ তলায় বাবার ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন সুলতান মাহমুদ সোহাগ। ২০১২ সালের মে মাসে এ সাব হাসপাতালে এলে তাকে মাত্র পাঁচ লাখ টাকায় সম্পূর্ণ চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু খরচ হয়ে যায় ৩০ লাখ টাকার ও বেশি। কিন্তু তারপরও সোহাগের বাবাকে চীনের গুয়াংজু হাসপাতাল থেকে ফিরতে হয় লাশ হয়ে।
এই সম্পর্কে সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রথমে পাঁচ লাখ টাকার কথা বলে পরে ৩০ লাখ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও বাবাকে বাঁচাতে পারি নি। পেয়েছি মরদেহ। এটা আমার কাছে হাসপাতাল মনে হয়নি। মনে হয়েছে এটা একটা টাকা ও মানুষ খাওয়ার ফাঁদ। এমনকি বাবার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যও তারা আমাদের কোনো ছাড় দেয়নি। ’
শুধু সোহাগ নয় সোহাগের মতো আশরাফুল আলম বাপ্পিও সব কিছু শেষ করে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে কোলন ক্যান্সার ধরা পড়ে বাপ্পির। চিকিৎসা নিতে সাব হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। সাব-হাসপাতালের মাধ্যমে চীনে যান তিনি। প্রথম পর্যায়ে ৭ লাখের বিপরীতে ১৫ লাখ টাকা চিকিৎসাবাবদ খরচ হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২৭ লাখ টাকা খরচ হয়। চিকিৎসাসহ সব মিলেয়ে ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয় বাপ্পির। এক পর্যায়ে বুঝতে পারেন প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তিনি।
বাপ্পির চিকিৎসার সমস্ত বিষয় দেখভাল করেন ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান। মিজানুর বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোলন ক্যান্সারের ধরা পড়ার পরপরই বাপ্পিকে এখানে নিয়ে আসা হয়। এখান থেকে ৭ লাখ টাকায় চিকিৎসা সম্ভব বলা হলেও ৪৫ লাখ টাকা খরচ করেও বাপ্পি এখন মুত্যুর পথযাত্রী। ’ এসময় হাসপাতালটির নামে মামলা করার সিদ্ধান্তের কথাও জানান মিজানুর।
তিনি আরও জানান, যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন এর মার্কিং ছিল ৭ দশমিক ৫। হাসপাতাল ছাড়ার সময় এর মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৫।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চায়নিজ নারী ‘জেন’ এ প্রতারক চক্রের প্রধান। একেক সময় তিনি একেক ফোন নম্বর ব্যবহার করেন। এত সব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হাসপাতালটি সম্পর্কে কিছুই জানে না স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গুলশান ১ নম্বরে নাভানা টাওয়ারে ৯ তলায় অবস্থিত এ সাব হাসপাতালটি সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে তিন বছর অতিবাহিত করেছে। শত শত ভুক্তভোগীর কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
সাব হাসপাতালটির প্রতারক চক্রের প্রধান হোতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেন রোগীকে মিথ্যা কথা বলে প্রলোভন দেখান। স্বল্প সময়ে, অল্প টাকা খরচের আশ্বাস দিয়ে রোগী ভর্তি করানোর পর আসল চেহারা উন্মোচন করেন তিনি।
জেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘মুক্তার আহমেদের (সুলতান মাহমুদ সোহাগের বাবা) অবস্থা খারাপ ছিল। যে কারণে তাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। ’
তবে মুক্তার আহমেদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। এছাড়া আশরাফুল আলম বাপ্পির বিষয়ে মুখ খোলেননি জেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৩
এমআইএস/সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর/জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর