বগুড়া: চাহিদার তুলনায় মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা কম হলেও উত্তরবঙ্গের বাণিজ্য নগরী খ্যাত বগুড়ায় এক ডজনেরও বেশি হাসপাতালে ৫১০টি পদ শূন্য রয়েছে। এর ফলে জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌছে দেওয়ার সরকারি উদ্যোগ ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এসব হাসপাতালের তালিকায় বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও সুন্দর হিসেবে পরিচিত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল ও ঐতিহ্যবাহী সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালসহ জেলার ১১টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম রয়েছে।
এসব হাসপাতালে ১ হাজার ১৭৮টি পদের বিপরীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ৩১৫ টি পদ। এছাড়া ফিল্ড সার্ভিস ও সাব সেন্টারসহ স্বাস্থ্য বিভাগে সর্বমোট শূন্য রয়েছে আরও প্রায় ১৯৫ টি পদ। সব মিলিয়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৫১০টি।
বগুড়া সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, সোনাতলায় ৩৮, সারিয়াকান্দিতে ৩৭, শিবগঞ্জে ৪৩, আদমদীঘিতে ৪২, দুপচাচিয়ায় ৩৫, কাহালুতে ১৯, নন্দীগ্রামে ২০, শেরপুরে ৯, ধুনটে ৯, গাবতলীতে ২৪ ও শাজাহানপুর উপজেলায় ১১ টি পদ শূণ্য রয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অধীনে থাকা সাব সেন্টার, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ফিল্ড সার্ভিসে শূন্য রয়েছে আরও ১৯৫ টি পদ।
বগুড়ায় ২০০ শয্যার ঐতিহ্যবাহী সরকারী মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকতা-কর্মচারীসহ গুরুত্বপূর্ণ সর্বমোট ৩৮১টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৩৫৩ জন। অর্থাৎ এখনে সব মিলিয়ৈ শূন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি পদ।
সোনাতলায় ৫০ শয্য বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে মঞ্জুরিকৃত ১৩৮ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০০ জন এবং একটি উপ-স্বাস্থ্য, ৪ টি সাব সেন্টার ও ফিল্ড সার্ভিস মিলিয়ে শূন্য রয়েছে আরও ৬টি পদ। অর্থাৎ এখানে মোট ৪৪টি পদ শূন্য রয়েছে।
সারিয়াকান্দিতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত কর্মকর্তা পর্যায়ে ২১টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৫ জন, কর্মচারী পর্যায়ে ৬৫টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৪৪ জন। এছাড়া ফিল্ড সার্ভিসে ৫৪টি পদের বিপরীতে ৭, চারটি সাব সেন্টারে ২ এবং ৮টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৯টি পদ শূন্য রয়েছে। মোট শূন্য পদের সংখ্যা ৫৯টি।
শিবগঞ্জে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা পর্যায়ে মঞ্জুরিকৃত ২০ টি কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ জন, কর্মচারী পর্যায়ে ৬৩ টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৪১ জন। এছাড়া উপজেলার আলিয়ার হাট ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বিভিন্ন পর্যায়ে ১৩টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৫ জন। সব মিলিয়ে শূণ্য পদের সংখ্যা ৪৩টি।
একইভাবে শিবগঞ্জে ফিল্ড সার্ভিসে ৮৯টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৮টি পদ। পাঁচটি সাব সেন্টারে ২০টি পদের সবগুলোসহ আটটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১৬টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে সর্বমোট শূন্য রয়েছে ৩৫টি পদ।
আদমদীঘিতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পর্যায়ে ৩৭টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১৬ জন এবং কর্মচারী পর্যায়ে ৪৫ পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৩১ জন। ফিল্ড সার্ভিসের শূন্য ৮টি সহ মোট শূন্য পদের সংখ্যা ৪৩টি।
একই উপজেলার সান্তাহারে ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত ১৩টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৬ জন, এবং উপজেলার পাঁচটি সাব সেন্টারে ২০টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ১৩ জন। এখানে সব মিলিয়ে শূণ্য পদের সংখ্যা ১২টি।
দুপচাচিয়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা পর্যায়ে মঞ্জুরিকৃত ১৬টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৫ জন, কর্মচারী পর্যায়ে ৬১টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৩৭ জন। আর শূন্য রয়েছে ৩৬টি পদ। এছাড়া ফিল্ড সার্ভিসে ৭টি এবং ছয়টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২৪টি পদের বিপরীতে ৫টি সহ সর্বমোট শূন্য রয়েছে ৪৮টি পদ।
কাহালুতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৪৮টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২৯ জন এবং ফিল্ড সার্ভিসে ৪৮টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৪৩ জন।
এছাড়া কাহালুতে ষোলটি সাব সেন্টারে ১৬টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ১১ জন এবং পাঁচটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭০টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৫৩ জন। এ উপজেলায় সর্বমোট শূন্য রয়েছে ৪৬টি পদ।
নন্দীগ্রামে ২০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পর্যায়ে মঞ্জুরিকৃত ৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ২ জন এবং কর্মচারী পর্যায়ে ৪৬ পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৩৩ জন। শূন্য রয়েছে ২০টি পদ।
একইভাবে এ উপজেলায় ফিল্ড সার্ভিসে ৪৩ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৬টি এবং পাঁচটি সাব সেন্টারে ১৮টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৩টি। এখানে সর্বমোট শূন্য পদের সংখ্যা ২৯টি।
শেরপুরে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৫৭টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৪৮ জন এবং শূন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ৯টি পদ। ফিল্ড সার্ভিসে ৫৪টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫টি পদ। দু’টি সাব সেন্টারে ৮টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ১টি এবং চারটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৮টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২টি। সব মিলিয়ে শূন্য রয়েছে ১৭টি পদ।
ধুনটে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮টি মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে ১৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ন্ত্রণাধীন ফিল্ড সর্ভিসে ৬৭টি পদের বিপরীতে ৭ জন এবং ষোলটি চলমান সাবসেন্টারে ২৮টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ১৮ জন। সবমিলিয়ে উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে ১২৩টির মধ্যে শূন্য রয়েছে ৩৬টি পদ।
গাবতলীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পর্যায়ে মঞ্জুরিকৃত ২৪টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৮ জন ও কর্মচারী পর্যায়ে ৬২ পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৫৪ জন। শূন্য রয়েছে ২৪ টি পদ। আর ফিল্ড সার্ভিসে ৭১ পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫টি।
এছাড়া এ উপজেলার পাঁচটি সাব সেন্টারে ২০টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৪ এবং চারটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৮টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২টি পদ। সর্বমোট এখানে শূন্য রয়েছে ৩৩টি পদ।
শাজাহানপুরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত কর্মকর্তা পর্যায়ে ১০টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৫ জন, কর্মচারী পর্যায়ে ৩৭টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৩১ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ এনেসথেসিয়া পদসহ শূন্য রয়েছে ১১টি পদ। এছাড়া একটি সাব সেন্টারে ৮টি পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২টি। অর্থাৎ উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগে শূন্য রয়েছে সর্বমোট ১৩টি পদ।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শুধু বগুড়ায় নয়, সারাদেশেই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। কিছু নিয়োগ হওয়ার পরেও বদলি ও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণসহ কয়েকটি কারণে বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়ায় চিকিৎসক সংকট দেখা দিচ্ছে। তবে সবকিছুর পরেও প্রায় প্রতিমাসেই বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার শূন্য পদের তালিকা সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
টিএমএম/জেডএম