ঢাকা: ভারতের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশের হাত-পা হারানো মানুষদের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। সাভার ট্রাজেডির ২৮ জনসহ বাংলাদেশের আরো আনেক বিকলাঙ্গ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে চান তারা।
বিশেষ করে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় যারা হাত বা পা হারিয়েছেন- তারা যাতে সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই চলাফেরা বা কাজ করতে পারেন সেজন্যই এ উদ্যোগ।
এ মানবিক কাজে হাত বাড়িয়েছে ভারতের রাজস্থানের জয়পুরের ‘ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতি’- বিএমভিএসএস। এ সংগঠনটি ১৯৭৫ সালে রেজিস্ট্রিভুক্ত। সংস্থা থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫০ হাজার বিকলাঙ্গ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েছেন।
বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন কারণে বিকলাঙ্গ ও পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষদের দুর্দশা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন বিএমভিএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ প্যাট্রোন ডি. আর. মেহতা। পঙ্গুদের কিভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন যোধপুরের মহাত্মাগান্ধী হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ গঙ্গারাম পুরোহিত এবং এম.এম. বাপনার সঙ্গে। এরপরেই তারা বিএমভিএসএস প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন।
বুধবার ঢাকায় ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতির ম্যানেজার (পিঅ্যান্ডসি) সঞ্জীব কুমার এবং একই সংস্থার টেকনিক্যাল সুপারভাইজর রঞ্জন নস্কর বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ দেশের বিকলাঙ্গদের বিনামূল্যে এ সহায়তা দেওয়ার কথা জানান।
সঞ্জীব কুমার আশাপ্রকাশ করে বলেন, আসছে অক্টোবরে প্রথমার্ধে তারা ঢাকায় এসে নানা কারণে যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন তাদের কৃত্রিম হাত এবং পা প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করবেন।
এ কাজের জন্য সার্জন ও টেকনিশিয়ানদের সমন্বয়ে গড়া চিকিৎসক দলটি কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ঢাকায় শেরেবাংলানগরের নিকার হাসপাতালে ক্যাম্প করে এসে কাজ শুরু করবে।
সঞ্জীব কুমার বলেন, কতো লোককে চিকিৎসা দিতে হবে তার একটা প্রাথমিক হিসাব নিতে গত শনিবার টেকনিক্যাল সুপারভাইজর রঞ্জন নস্করসহ তারা ঢাকায় আসেন।
তিনি বলেন, একজন বিকলাঙ্গ মানুষের কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। অক্টোবরে আগত ভারতীয় প্রতিনিধিদলটি শুধু নিজেরাই প্রতিস্থাপন কাজ করবেন না। সঙ্গে নেবেন এ দেশের কর্মীদেরও। এজন্য তারা নিকারে ক্যাম্প করে এদেশের আগ্রহীদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাজের সহযোগী করে নেবেন।
এ সেবা দেওয়ার জন্য তারা কোনো অর্থ-কড়ি নেবেন না। স্রেফ মানবিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এবারই প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসছেন।
এর আগে তিনি এবং রঞ্জন নস্কর যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিয়ন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের নানাদেশে গিয়ে বিকলাঙ্গদের সেবা দিয়েছেন। সঞ্জীব কুমার এবং রঞ্জন নস্করের বাংলাদেশে এটাই প্রথম সফর। বাংলাদেশ সফরের ভূয়সী প্রশংসা করে করে বলেন, এ দেশের মানুষের আতিথেয়তা তুলনাহীন।
তাদের এ মানবিক সেবার জন্য বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইম ম্যাগাজিন ভূয়সী প্রশংসা করে ২০০৯ সালে বিশেষ নিবন্ধ ছেপেছে বলে উল্লেখ করেন সঞ্জীব কুমার ।
সঞ্জীব কুমার এবং রঞ্জন নস্কর বলেন, অক্টোবরে নিকার হাসপাতালে তাদের দলটি ক্যাম্প করে বিকলাঙ্গদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন কাজ করবেন। প্রয়োজনবোধে তারা ঢাকায় ৩/৪ সপ্তাহ অবস্থান করবেন।
ঢাকায় অবস্থানকালে তারা এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাও সেরে নিয়েছেন। কথা বলেছেন সাভার সিআরপি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও। তারা জানান, তাদের এ সেবার জন্য ভারত সরকার আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে।
সাভার ট্রাজেডির আহত ছাড়াও কতো সংখ্যক বিকলাঙ্গকে কৃত্রিম হাত ও পা সংযোজন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে তার একটা হিসাব বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন সঞ্জীব কুমার এবং রঞ্জন নস্কর।
এ হিসাবটা পেয়ে তাঁরা কাজ শুরু করবেন। বৃহস্পতিবার তারা স্বদেশের পথে ঢাকা ছাড়বেন বলে জানান সঞ্জীব কুমার এবং রঞ্জন নস্কর।
মূলত: সাভারের রানা ট্রাজেডির পর ভারত সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আবেদন করে। এরপর ভারত সরকারের আহবানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে ‘ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতি’- বিএমভিএসএস। তাদের লোকবল ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বিকলাঙ্গদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন।
ছবি তুলেছেন ফটোসাংবাদিক কাশেম হারুন
বাংলাদেশ সময় : ১০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৩
সম্পাদনা: এসএস