ঢাকা: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাড়ে পাঁচ কোটি শিশুকে আরও চারটি রোগের টিকা দেওয়া হবে। হাম, রুমেলা, মিছেল ও জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে এ টিকা দেওয়া হবে।
এর আগে একসাথে এত শিশুকে টিকা দেওয়া হয়নি। এত বড় বাজেটের প্রোজেক্ট বাংলাদেশে আসেনি। আর্ন্তজাতিক লায়ন্স সংস্থা এমআর প্রোজেক্টের আওতায় ৬’শ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ টিকা সরবরাহ করছে।
৯ মাস থেকে ১৫ বছরের বয়সীদের এ টিকা প্রদান করা হবে। এ টিকা প্রদানের ফলে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চারটি রোগে ৪৫ শতাংশ মৃত্যুহার কমে যাবে।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সারাদেশে এক যোগে এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল-মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল শিশুকে এ টিকা প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ সরকার ও ১’শ ১০টি লায়ন্স ক্লাবের ৪৩০১ জন সদস্যের সহায়তায় এ টিকা প্রদান করা হবে। দি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব লায়ন্স ক্লাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ প্রকল্পের বাংলাদেশ পরিচালক পিআইডি লায়ন শেখ কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায়ই চারটি রোগে বহু শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। সরকার ও এনজিওগুলো বিভিন্ন সময় টিকা দিলেও শিশু মৃত্যুহার কমেনি। আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুহার কমাতে এ উদ্যোগ গ্রহন করেছে্ন। ’
তিনি বলেন, ‘এ সংস্থা বিশ্বের সাতটি দেশের শিশু মৃত্যুহার কমাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার নাইজেরিয়া, নাইরুব ও জাম্বিয়াতে এ টিকা প্রদান করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে টিকা প্রদানের জন্য নেপাল ও বাংলাদেশকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘চারটি রোগে নেপালে শিশু মৃত্যুহার ছিল সবচেয়ে বেশি। নেপাল সরকারের সহায়তায় জনগণকে বোঝানো হয়েছে এ টিকা শিশুকে দিলে ৮৫ শতাংশ শিশু মৃত্যুহার কমে যাবে। প্রথমে অল্পসংখ্যক নেপালি জনগণ শিশুদের এ টিকা দেয়।
পরে ৮৫ শতাংশ শিশু মৃত্যুহার কমে যাওয়ার কথা শুনে হাজার হাজার নেপালি তাদের শিশুদের টিকা দেয়। এ সংবাদ পার্শ্ববতী দেশ ভুটান, শ্রীলংকা ও ভারতে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার শিশু নিয়েও তারাও নেপালে টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে টিকা গ্রহণ করে।
বর্তমানে এ তিনটি দেশে গত তিন-চার বছর যাবৎ চারটি রোগে শিশু মৃত্যুহার শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। ’
বাংলাদেশ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে এ টিকা প্রদানের জন্য সরকারের সাথে লায়ন্স ক্লাবের চুক্তি হয়েছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এ টিকা প্রদান করা হবে। টিকার চালানের বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশে চলে এসেছে। ’
তিনি বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশ রোটারি ক্লাব কিছু সংখ্যক শিশুকে এ টিকা দিয়েছে। কিন্তু লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে আসা সাড়ে পাঁচ হাজার টিকা দেওয়ার পর দেশের আনাচে-কানাচে একটি শিশুও বাদ পড়বে না। ২-১৫ মাসের মধ্যে এ ক্যাম্পেইন শেষ করা হবে। ’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাবের গর্ভনর লায়ন এমএ রশিদ শাহ সম্রাট বাংলানিউজকে বলেন, ‘লায়নদের সেবার সূর্য কখনো অস্ত যায় না। বর্তমান বিশ্বে ২’শ ৮টি দেশে ৭’শ ৫০ জেলায় ৪৫ হাজার ক্লাবে ১৪ লক্ষ লায়ন সদস্য দু:স্থ ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত। ’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে চারটি রোগে শিশু মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। এদিক বিবেচনায় সবচেয়ে বড় প্রজেক্টের মাধ্যমে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। সরকার লায়ন্স ক্লাবকে এ ধরনের বড় প্রকল্পের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। ’
এ প্রকল্প সফল করতে তিনি সরকার ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৩
আরইউ/কেএইচকিউ/এএসআর/জেসিকে