ঢাকা: প্রাণঘাতী ব্যাধিগুলোর মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোক অনেক বেশি বিপজ্জনক। কিন্তু মানুষ এমনিতেই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় না।
তবে জীবনধারায় সচেতনতামূলক পরিবর্তন এনে অনেকাংশেই ব্রেইন স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে এ পর্যায়ে থাকছে ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়।
ব্রেইন স্ট্রোক
মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটার কারণে মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। একারণে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা গিয়ে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে থাকে। এছাড়া, মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে, ধমনীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েও ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে থাকে।
ব্রেইন স্ট্রোকের উপসর্গ সমূহ
স্ট্রোক করার কয়েক মিনিটের মধ্যে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যেতে থাকে এবং উপসর্গগুলো দেখা দিতে থাকে। যেমন:
• স্মরণ শক্তি কমে যেতে পারে।
• শরীরের যেকোনো একপাশ অবশ হয়ে যেতে পারে।
ব্রেইন স্ট্রোকের পর বিশেষ করে মুখ, হাত, পা ও কথা বলার ওপর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
মুখের ওপর প্রভাব
• রোগী কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
• মুখ যেকোনো দিকে বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
হাতের ওপর প্রভাব
• দুই হাত বা একহাত অবশ হয়ে যেতে পারে।
• এক বা দুই বাহু ওপরে তুলতে পারবে না ।
কথা বলার ওপর প্রভাব
• ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী স্পস্টভাবে কথা বলতে পারবে না।
• এমনকি কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ
• ঘুম ঘুম ভাব হবে, ঝিমুনি আসবে।
• চোখে ঝাপসা দেখা যাবে।
• প্রচুর মাথা ব্যথা শুরু হবে।
করণীয়
ব্রেইন স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ব্রেইন স্ট্রোকের প্রকারভেদ
ইচকেমিক (Ischaemic) স্ট্রোক
মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত প্রবাহের ব্যাঘাত ঘটার কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে থাকে। সাধারণত রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে বা কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ইচকেমিক স্ট্রোক হয়ে থাকে। প্রায় ৮০ ভাগ ব্রেইন স্ট্রোকই হচ্ছে ইচকেমিক (Ischaemic) স্ট্রোক।
ইচকেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসা
এ ধরনের স্ট্রোক চিকিৎসা করতে হলে অবশ্যই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে হবে বা জমাট বাঁধা রক্ত ভেঙে তরল করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এরপর ব্রেইন স্ক্যান (CT) এবং ম্যাগনেটিক রেজনেন্স ইমাজিংয়ের (MRI) মাধ্যমে পরীক্ষা করে স্ট্রোকের মাত্রা সম্পর্কে সঠিকভাবে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
জমাট বাঁধা রক্ত (Thrombolysis) তরল করতে যেসব ওষুধ সেবন করা হয় সেসবের মধ্যে অ্যাল্টিপ্লেস (alteplase) ও আস্পিরিন (Aspirine) উল্লেখযোগ্য।
আর মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপ কমাতে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যেসব ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: থাইয়াজাইড ডিউরেটিক্স (Thiazide diuretics)। এই ওষুধ প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে শরীর থেকে পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং রক্তের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ
রক্তে যদি কোলেস্টরেল বা LDL এর মাত্রা বেশি থাকে তবে স্টাটিন গ্রুপের ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। যেমন: Atorvastatine, lovastatine প্রভৃতি।
হ্যামরেজিক (Haemorrhagic) ব্রেইন স্ট্রোক
মস্তিষ্কের দুর্বল রক্তনালীর ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহের সময় রক্তনালী ফেটে গিয়ে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়াকে হ্যামরেজিক স্ট্রোক বলে।
যেসব কারণে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে থাকে
সাধারণত ৬৫ বছরের ওপরে বয়স হলে ব্রেইন স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাছাড়া, মধ্য বয়সেও ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে। এমনকি বাচ্চাদেরও ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে। এই ব্রেইন স্ট্রোকের পিছনে কারণ সমূহ হলো;
• শরীরে অতিরিক্ত ওজন।
• শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাব।
• পুষ্টিহীন খাবার গ্রহণ না করা।
• কোনোভাবে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হলে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে কিংবা হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের সমস্যা হলে।
• ডায়াবেটিসের মাত্রা অনেকদিন ধরে বেশি থাকলে।
• জন্ম নিয়ন্ত্রণ ওষুধ বা কোন হরমোনাল ওষুধ সেবনের কারণে।
• নিয়মিত মাদক (হিরোইন, কোকেইন জাতীয়) সেবন করলে।
• রক্তে অ্যামাইনো এসিড অতিমাত্রায় বেড়ে গেলে।
• নিয়মিত ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন করলে।
• মানসিক হতাশা বেড়ে গেলে।
ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
ব্রেইন স্ট্রোক প্রতিরোধে যেসব কাজ করতে হবে তা হলো;
• স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
• নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
• মাদক সেবন বন্ধ করতে হবে।
• রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
নিয়মতান্ত্রিক ধারায় স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করে মরণব্যাধি স্ট্রোকের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৩
এইচএ/আরকে