ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

ডায়াবেটিসে অকালে বার্ধক্য, রেহাই পেতে করণীয়

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৪
ডায়াবেটিসে অকালে বার্ধক্য, রেহাই পেতে করণীয়

ঢাকা: নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদাসীনতা, অবহেলা এবং খাবার গ্রহণ, ঘুম ও কর্মস্থলের তৎপরতায় অনিয়মের কারণেই ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে মানুষের শরীরে। এই ডায়াবেটিসই একসময় মানুষকে দ্রুত বার্ধক্যে ঠেলে দেয়, পরোক্ষভাবে ঠেলে দেয় মৃত্যুর কোলে!

সম্প্রতি ডায়াবেটিসের কারণ ও পরিণতি নিয়ে একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করেছেন ভারতের ডায়াবেটিস গবেষণা কেন্দ্রের (আইডিআরএফ) সভাপতি ও ডাক্তার এ রামচন্দ্র ডায়াবেটিস হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এ রামচন্দ্র।



আলাপে এই প্রথিতযশা ডায়াবেটিস গবেষক জানান, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের পেশাজীবী তরুণ-তরুণীদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। কাজের চাপে এবং স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন থাকার কারণে তারুণ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

তিনি আরও জানান, ইন্টারনেটনির্ভর চাকরিজীবীদের খাওয়ার নিয়ম, ধরন ও মাত্রায় অনেক বেশি ভিন্নতা থাকার কারণে তারা অতি শিগগির ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।

এটাকে বিশ্বায়নের বিরূপ প্রভাব বলেই মনে করেন ডা. এ রামচন্দ্র।

তিনি জানান, শহুরে মানুষদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি এবং জীবন-যাপনের অনিয়মের কারণেই তাদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। একসময় পুরো বিশ্বই যখন নগরে পরিণত হবে তখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাবে।

তবে আশার কথা জানিয়ে ডা. রামচন্দ্র বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান আইডিআরএফ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জনগণ সচেতন হলে এমনিতেই ৩৬ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন।

ডা. রামচন্দ্র বলেন, জীবন যাপনে একেবারেই অনিয়মের কারণে অনেক শিশুও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হচ্ছে। এটা টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলে পরিচিত। ক’দিন আগে ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভোগা ৪৫ বছর বয়সী এক নারী তার ১৪ বছর বয়সী এক শিশু নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। বলে রাখা ভালো, শিশুটির ওজন ছিলো ১১৫ কিলোগ্রাম। নিজের ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করলেও শিশুটির বয়স কম হওয়ায় তার স্বাস্থ্যের কোনো পরীক্ষা করতে চাইলেন না তার মা। অথচ, দিন দুয়েক পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুটিরও ডায়াবেটিস হয়েছে।

আইডিআরএফ পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার হার এশিয়া ও আমেরিকায় বেশি দেখা যাচ্ছে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ৬০ বছর বয়সী আমেরিকান নাগরিক ও ৪৫ বছর বয়সী এশিয়ান- বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের নাগরিকরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, তথ্য-প্রযুক্তি তথা অনলাইননির্ভর পেশায় যারা রাত জেগে কাজ করছেন তারাই ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনে ডায়াবেটিসে আক্রমণ করার কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়, কাজের চাপ একজন মানুষের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কাজে চাপ মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে রোগপ্রতিরোধক হরমোনগুলোক অকেজো করে দেয়। কোর্টিসোন ও অ্যাড্রেনালাইন (অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিনিঃসৃত একধরনের হরমোন এবং বৃক্করস) হরমোনগুলোকেও অকেজো করে দেয়। এ কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়, ইনস্যুলিন প্রতিরোধক হরমোনগুলোর কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

পরিবারের কোনো সদস্যের যদি উচ্চরক্তচাপে ভোগার পরম্পরা থাকে তাহলে এসব কারণে খুব অল্প বয়সেই উত্তরসূরীকে এই রোগে ভুগতে হবে।

ফাস্টফুড খাওয়ার কারণে ধূমপান ও কোমল পানীয় পানের মতোই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যদি কেউ ডায়াবেটিস নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা-ভাবনা করেন না, ভাবেন এমনিতেই চলে যাবে, একসময় দেখা যাবে আক্রান্ত ব্যক্তির স্লায়ু, চোখ, কিডনিতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রোগীর শরীরে বয়স্ক ছাপও ফেলতে পারে এই ডায়াবেটিস। এমনকি বৃদ্ধের মতোই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন রোগ দানা বাঁধতে পারে।

ডায়াবেটিসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, কেউ যদি কাজের ধরন পরিবর্তন করতে না পারেন, তবে তিনি যেন অন্তত খাবার গ্রহণের ব্যাপারে নিয়মিত হন এবং চর্বি জাতীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যাপারে সংযত হন। অনেক বেশি সবজি খেতে হবে এবং প্রতিদিন অন্তত ২/৩টি ফলমূল খেতে হবে। খাবার অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে।

ঘুমাতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কম্পিউটারের সামনে থেকে অন্তত দু’ ঘণ্টা পরপর ওঠার অভ্যাস করতে হবে এবং হাঁটাহাঁটি করতে হবে। কারণ, অনেক সময় ধরে একটি আসনে বসে থাকায় শারীরিক স্থিতাবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এতো চাপ ও অনিয়মের মধ্যে নিয়ম করে যোগব্যায়াম করতে হবে, সঙ্গে মেডিটেশনও।

খাবারে অবশ্যই নিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি আঁশজাতীয় প্রাকৃতিক খাবার খেতে হবে বেশি, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। জাম্বুরা ও এ জাতীয় ফলমূল খেতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখা বাদাম খাওয়া যেতে পারে। রান্না করা খাবারে লবঙ্গ, দারুচিনি, ওরেগানো, মারজোরামসহ এ ধরনের মশলা খেতে হবে। নিয়মিত খেতে হবে চামড়াসহ শসা। বর্জন সম্ভব না হলে চর্বিহীন মাংসও খাওয়া যেতে পারে, তবে অবশ্যই সীমিত।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।