ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মশা নিরোধে হুমকিতে স্বাস্থ্য

মনিরুজ্জামান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৪
মশা নিরোধে হুমকিতে স্বাস্থ্য

ঢাকা: যতোই বাড়ছে গরম, ততোই বাড়ছে মশার উপদ্রব। সেই সঙ্গে মশা মারতে কামান দাগানোর মতো বাড়ছে নানা আয়োজন।

মশা থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হচ্ছে- কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার, ম্যাটসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদ্ধতির। ক্ষতিকর দিক জেনে অথবা না জেনেই  এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন ভোক্তারা।

রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি অর্ধশতাধিক রকমের কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার ও ম্যাট বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মরটিন, এসিআই, গ্লোব, এক্সপেল, গুডনাইট, কিলার, একমি, ফিনিশ, বুস্টার।

বাংলাদেশ সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার এক্সটেনসন (Department of Agricultural Extension) ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২৪০টি বিভিন্ন রকমের মশা নিরোধক (কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার ও ম্যাট) উৎপাদনে বিভিন্ন রকম কেমিকেল ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।   এসব কেমিকেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অ্যালেথ্রিন, ডি-অ্যালেথ্রিন, ডি-ট্রান্স অ্যালেথ্রিন, পারমেথ্রিন, টেটরামেথ্রিন।

বিএসটিআই’র লাইসেন্স নং BDS-1089 এর আওতায় এসব কেমিকেল নির্ধারিত মাত্রায় কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার ও ম্যাট তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। বিএসটিআই’র নির্দেশনা অনুসারে এসব বিষাক্ত পণ্য বাজারজাতকরণে পণ্যের প্যাকেটের গায়ে ব্যবহার নির্দেশিকা ও সতর্কতাও উল্লেখ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, মশা নিরোধক এসব পণ্য ব্যবহার করার সময় নির্ধারিত মাত্রা বজায় রাখতে হবে। কয়েল, ম্যাট ও ভ্যাপোরাইসার ব্যবহারের সময় ঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে, যাতে ঘরে বিষাক্ত ধোঁয়ার আধিক্য বৃদ্ধি না পায়। অ্যারোসল ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োগের সময় কক্ষ নির্দিষ্ট সময় ( প্রায় আধা ঘণ্টা) জন-মানুষ শূন্য রাখতে হবে।

গবেষণায় আরো জানা গেছে, এসব সতর্কতা অবলম্বন না করলে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এসব ব্যবহার করলে অ্যাজমা, অ্যালার্জি, বন্ধ্যাত্বসহ স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।   

বাজারে যেসব কোম্পানির কয়েল, অ্যারোসল, ভ্যাপোরাইসার ও ম্যাট বেশি বিক্রি হয়, প্রায় সবগুলোরই বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় বিটিভিসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। ‘৮টা বাজে-পালাই’, ‘সুগন্ধে মেতে থাক সারা রাত’, ‘১২ ঘণ্টা সুরক্ষা’, ‘আট দিক থেকে কার্যকর’- বিজ্ঞাপনে এরকম বিভিন্ন চমকপ্রদ কথা থাকলেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও এর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা থাকে না।  

অনেক ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েলের কার্যকারিতার জন্য তারা নির্দেশনা অনুসরণ করেন না। আবার অনেক ভোক্তা সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি জানেন না বলেও জানিয়েছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা তানভীর বলেন, মশার হাত থেকে বাঁচতে কয়েল ব্যবহার করি। জানালা খোলা রাখলে কয়েল কাজ করে না। বাধ্য হয়ে দরজা-জানালা লাগিয়ে কয়েল জ্বালাতে হয়।

মধ্য বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মাসউদ জানান, কাজ করার সময় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে তিনি অ্যারোসল ব্যবহার করেন। কিন্তু এ সময় বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকে না।  

প্রচলিত কয়েল- অ্যারোসলের এসব ঝুঁকির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাজারে আসা চায়না কয়েল নামে ‘ব্লাক কয়েল’ (অদৃশ্য ও গন্ধবিহীন ধোঁয়া তৈরি করে)। বাওমা, ওবামা, বেঙ্গল টাইগার নামে চীনের ফুজিয়ানজিনজিয়াং কোম্পানির এ কয়েল এখন ছড়িয়ে পড়েছে বাজারে। এক্ষেত্রে একই কোম্পানির এ কয়েল বাংলাদেশের তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তিন নামে আমদানি করছে। বগুড়ার মের্সাস রফিক ট্রেডার্স ‘বাওমা’ নামে, ঢাকার মের্সাস সাইদুর এন্টারপ্রাইজ ‘ওবামা’ নামে এবং চট্টগ্রামের এশিয়া উইনার ‘বেঙ্গল টাইগার’ নামে কয়েলটি বাজারজাত করেছে।

ফিলিপাইনের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ১৬টি মশা নিরোধককে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকারক উল্লেখ করে বাজারজাত বন্ধের নির্দেশ দেয়। এ তালিকার মধ্যে বাওমা নামের কয়েলটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু অধিক কার্যকারিতার জন্য ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই এ কয়েল ব্যবহার করছেন অনেকেই।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একটি আট ঘণ্টার কয়েল ৫১টি সিগারেটের সমান ক্ষতিকর। ‍আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ ও ইন্টারনেট সায়েন্স পাবলিকেশন্স- এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রেও কয়েল, অ্যারেসলসহমশা নিরোধক বিভিন্ন পণ্যের ক্ষতিকর দিকে উঠে এসেছে।

এসব ক্ষতির কথা বিবেচনা করে মশা নিরোধে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ ও মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ক্লিনিক্যাল সায়েন্স ডিভিশনের প্রধান বিজ্ঞানী ড. শফিকুল এ. সরকার বাংলানিউজকে বলেন, প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা (preventive measure) তুলনামূলকভাবে অনেক কার্যকর এবং নিরাপদ।

তিনি আরো বলেন, ঝেপঝাড়, ফুলের টব, নালা পরিষ্কার রাখলে মশার বংশ বৃদ্ধি কম হয়। এ বিষয়ে সতর্ক থাকলে কয়েল/অ্যারোসল ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৭ ঘন্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।