ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

দেশে ডায়াবেটিস রোগী ৫৮ লাখ, ২০৩০ সালেই তিনগুণ!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪
দেশে ডায়াবেটিস রোগী ৫৮ লাখ, ২০৩০ সালেই তিনগুণ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশে দিন দিন বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। বর্তমানে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮ লাখ।

আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা তিনগুণ ছাড়িয়ে যাবে এমন আশংকা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার সাভারের ব্র্যাক সিডিএমএ মিলনায়তনে ডেনমার্কের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নভো নরডিস্ক আয়োজিত বাংলাদেশ জাতীয় প্রিমিক্স সামিটে এ তথ্য তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অংশ নেন দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান দুই শতাধিক ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ।

অনুষ্ঠ‍ানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি প্রফেসর এ কে আজাদ খান।

বক্তারা বলেন, ডায়াবেটিস বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। বিশ্বে এই ব্যাধি পঞ্চম মৃত্যুর কারণ। ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে একাধিক ইনসুলিন দিনের একেক সময় গ্রহণের অসুবিধা এবং ইনজেকশন ভীতির বিষয়টিও উঠে আসে সম্মেলনে।

নভো নরডিস্ক ফার্মা (প্রা:) লিমিটেড বাংলাদেশ এর প্রোডাক্ট ম্যানেজার কামসিয়া সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের কঠিন জীবনকে কীভাবে আরো সহজ করা যায় তার কার্যকর উপায় বের করে আনাই এ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।  

ভারতের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. সারিতা বাজাজ বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লোকোজ নিয়ন্ত্রণে যে বিষয়টির ওপর সবচাইতে বেশি নজর রাখতে হবে তা হচ্ছে, ইনসুলিন দ্রুত শুরু করা আর তা নিয়মিত করা।

ভারতের আরেক বিশেষজ্ঞ ডা: সঞ্জয় কালরা বলেন, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নতুন উদ্বোধন সম্পর্কে রোগীদের সচেতন থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে নতুন কী কী উদ্ভাবন অপেক্ষা করছে তাদের জন্যে।

নভো নরডিস্ক ফার্মার বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজন কুমার বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে প্রচলিত অন্যান্য ইনসুলিনের চাইতে নভো নরডিক্সের প্রস্তুতকৃত ইনসুলিন ‘নভোমিক্স’ পাঁচবারের স্থলে মাত্র দুইবার ব্যবহারেই আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য পরবর্তী ও পূর্ববর্তী রক্তে গ্লোকোজ এর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সম্ভব। ফলে এটি ক্রমেই চিকিৎসক ও আক্রান্তদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

তিনি আরো জানান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মৃত্যুঝুঁকিসহ নানা রোগের কারণ। পূর্বমিশ্রিত ইনসুলিন এনালগ ডায়াবেটিস ব্যাধির যে কোনো অবস্থায় ব্যবহার করা যায়। এটি দিনে দুইবার অথবা তিনবার গ্রহণ পদ্ধতির সুবিধাসহ রক্তে শর্করাস্বল্পতা রোধে সাহায্য করে।

‘বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর ৬৯ শতাংশই পূর্বমিশ্রিত ইনসুলিন এনালগ ব্যবহার করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একাধিক ইনসুলিন দিনের একেক সময় গ্রহণ করার অসুবিধা এবং ইনজেকশন ভীতি কমাতে পূর্বমিশ্রিত আধুনিক ইনসুলিন এনালগ দিচ্ছে দুইটি ইনসুলিন একসঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় যা আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী গ্লুকোজ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম। ’

বারডেমের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিসের প্রকোপ এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। যে কারণে বিশ্বের পঞ্চমতম মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এ ব্যাধিকে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৫৮ লাখ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এখনই এ রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা তিনগুণে দাঁড়াবে। আর আধুনিক ইনসুলিন চিকিৎসা পদ্ধতির হচ্ছে নির্ধারিত গ্লুকোজের মাত্রা অর্জন সেইসঙ্গে রক্তে শর্করাস্বল্পতা বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোধ এবং অতিরিক্ত ওজন রোধ।

নভো নরডিস্ক এর গ্লোবাল মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. প্রসন্ন কুমার জানান, ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকদের অবহিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। নতুন চিকিৎসা পদ্ধতিতে কীভাবে সকলকে সংযুক্ত করা যায়।

‘সেইসঙ্গে পূর্বমিশ্রিত আধুনিক ইনসুলিন সম্পর্কযুক্ত গবেষণামূলক ক্লিনিক্যাল ডাটা আমরা উপস্থাপন করেছি। যাতে প্রমাণিত হয়েছে, আধুনিক ইনসুলিন সত্যিই ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রণে কার্যকরী এবং চিকিৎসা পদ্ধতির প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করা আসলেই উপযোগী। ’

সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ প্রফেসর হাজেরা মাহতাব, প্রফেসর জাফর আহমেদ লতিফ, প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন।
সম্মেলন সঞ্চালনা করেন ভারতের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্জয় কালরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।