ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

নার্সিং সেবার কারণেই সেরা বামরুনগ্রাড

আদনান রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৪
নার্সিং সেবার কারণেই সেরা বামরুনগ্রাড ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: রেকর্ড আছে, অনেকে মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন। পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে পায়ে হেঁটে দেশে ফিরেছেন।

ওষুধের অ্যাকশন-রিঅ্যাকশন পরের বিষয়, রোগীর সেবাই বেশি প্রাধান্য পায় হাসপাতালটিতে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালটি হচ্ছে, ব্যাংককের বামরুনগ্রাড ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল। রোগীদের মল-মূত্র পরিষ্কারের জন্য এখানে নেই কোনো বুয়া কিংবা আয়া। প্রতি ৪ জন রোগীর জন্য রয়েছেন একজন করে নার্স। তারাই এসব পরিষ্কার করেন। ক্লিনাররা শুধু ফ্লোর পরিষ্কার করেন, তারা রোগীদের গায়ে হাতও দিতে পারে না।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ জাকির হুসাইন বামরুনগ্রাডের নার্সিং সেবাকে পিওর মাদার কেয়ার বা সন্তানের প্রতি মায়ের যত্নের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তারিফ আবদুল্লাহ নামের একজন বাংলাদেশি রোগীর ছোট ভাই সোহেলও বললেন একই কথা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার নার্সিংয়ে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। যে রোগী যখন যা বলছেন, নার্সেরা তাই করছেন। সেবা দিতে তাদের কোনো বিরক্তি নেই।

হাসপাতালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ১২ লাখ রোগী এ হাসপাতালের সেবা নেন, যাদের জন্য রয়েছে ৯০০ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

খরচের পাল্লাটা একটু ভারি, তবে প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি অথবা আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নেন। তাদের জন্য এখানে রয়েছেন ৮ জন বাংলাদেশি ইন্টারপ্রেটার বা কাস্টমার সার্ভিস কর্মকর্তা।

হাসপাতালটির সেরা হওয়ার পেছনে নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথাই বললেন হাসপাতালটির কাস্টমার সার্ভিস অফিসার (বাংলাদেশ) এম এ হাসান ও ফাতেমা নুরজাহান। এম এ হাসান জানান, কোনো অভিযোগ বা বিরক্তি ছাড়াই রোগীর প্রতিটি কাজ করেন নার্সেরা। সেবার পাশাপাশি রোগীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার দায়িত্বটিও তাদের।

হাসপাতালটিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টাকায় একজন পুরুষ তার শরীরের বেসিক রোগগুলো নির্ণয়ে চেকআপ করাতে পারবেন। আর নারীদের জন্য খরচটা সাড়ে ১৩ হাজার টাকা।

আর দেহের প্রতিটি অঙ্গের জটিল রোগসহ সব ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্টের খরচ প্রায় ৪২ হাজার টাকা। তবে চল্লিশোর্ধ নারীদের জন্য খরচটা ৪৮ হাজার টাকা।
bumgrungrad_hospital
হাসপাতালটির দেওয়া তথ্যমতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার রোগী বামরুনগ্রাড হাসপাতালে আসেন। কারণ, বিশ্বের অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে কম খরচে প্যট স্ক্যান, ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড স্ক্রিনিং, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, সার্জিক্যাল অনকোলজি ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করে থাকে হাসপাতালটি।

এছাড়াও হার্টের সকল ধরনের চিকিৎসাসেবা, কিডনিতে  স্টোন-ইনফেকশন, ব্লাডার ক্যান্সারের চিকিৎসাও হয় এখানে। নিঃসন্তান স্বামী-স্ত্রীর জন্য হাসপাতালটিতে ফার্টিলিটি সেন্টার, অবসটেটিক্স, প্রিনেটাল জেনেটিক্সের ব্যবস্থাও রয়েছে।

হাসপাতালটির পেশাদারিত্ব নিয়ে বললেন বামরুগ্রাডের এক কর্মকর্তা। হাসপাতালের শিষ্টাচার বহির্ভূত হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তিনি বললেন, রোগীর সকল প্রশ্ন শেষ হবার আগ পর্যন্ত তারা সমস্যা শুনতেই থাকেন। রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার আগ পর্যন্ত ‘আর কিছু বলতে চান কি-না’ জিজ্ঞেস করেন।

বাংলাদেশি প্রতিনিধির ভাষ্য অনুযায়ী, সুস্থ হতে কতোদিন লাগবে, কতোদিন বাঁচবো, কিংবা শতভাগ সুস্থ হবো তো? রোগীর এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দেন না তারা। ‘ঈশ্বর জানে’ অথবা ‘দেখা যাক’ এমনটি বলে থাকেন। রোগীর শারীরিক সুস্থতার আগে মানসিক সুস্থতার দিকেও জোর দেন তারা। আর ডাক্তার-নার্সসহ হাসপাতালের প্রত্যেক স্টাফ কোনো বিরক্তি ছাড়া হাসিমুখে রোগী ও স্বজনদের হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য রয়েছেন। প্রত্যেকেই নম্র-ভদ্র।

বামরুনগ্রাডে শৃঙ্খলার বিষয়ে ‘নো কম্প্রোমাইজ’র কথা বললেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও। দুবাই থেকে আসা আবু খালিদ বললেন, রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তাররা কোনো ছাড় দেন না। তারা রোগীকে যে ক’টি ডায়াগনস্টিক টেস্ট করাতে বা ওষুধ খাওয়াতে বলেন, সেগুলো না করে গেলে তারা রোগী দেখেন না।

বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য বামরুনগ্রাডে আসার আগে রাজধানীর পান্থপথে রেফারেল অফিসে যেতে হবে। সেখানে রোগের বিষয়ে শুনে ও পূর্ববর্তী ডাক্তারের ফাইল হাসপাতালটির অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে পাঠানো হয়। এবং সেখান থেকেই ফিরতি ই-মেইলে ডাক্তারের নাম ও সময় দেওয়া হয়।

সেখানে বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার এনএমএম কামালুর রহমান ভূঞা রোগীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করেন। লোকাল অফিস থেকে সঠিক ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও খরচের ধারণা, ভিসা প্রাপ্তিতে সহায়তা, ব্যাংককে থাকার ব্যবস্থা, ও দোভাষী সেবা দেওয়া হয়।

যারা সরকারি বা অপরের পয়সায় চিকিৎসা করেন, তারা অবশ্য সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা করান। তবে তাদের দ্বিতীয় পছন্দ বামরুনগ্রাড। হাসপাতালটিকে ‘মধ্যবিত্তদের মাউন্ট এলিজাবেথ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশি কান্ট্রি ম্যানেজার এনএমএম কামালুর রহমান ভূঞা।

**রিজেন্টে ‘হ্যাপি জার্নি’
**হাজার মাইল দূরের সফল বাংলাদেশি

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।