ঢাকা: বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচজন অকালে মারা যান।
শনিবার (২২ নভেম্বর) চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এভাবেই কিডনি রোগের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়।
সেমিনারের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পসের সেবা কার্যক্রম বিস্তৃত করার অংশ হিসেবে শনিবার (২২ নভেম্বর) ‘ক্যাম্পস কিডনি অ্যান্ড ডায়ালাইসিস সেন্টার চাঁদপুর’ উদ্বোধন করেছে। এ উপলক্ষেই সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. দীপু মনি (এমপি)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দীপু মনি বলেন, শুধু মানুষের অসচেতনতা ও জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে দেশব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বেড়ে চলেছে। সচেতনতাই এ রোগ প্রতিরোধের মূলমন্ত্র।
তিনি বলেন, একজন অসচ্ছল মানুষ যখন কঠিন রোগে আক্রান্ত হন, তখন তিনি বুঝতে পারেন অসহায়ত্ব কি জিনিস! মানুষ হিসেবে মানুষেরই কর্তব্য অসহায়-দরিদ্র আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ানো। ক্যাম্পস এরকম সেবার মানসিকতা নিয়ে চাঁদপুরে পা দিয়েছে। সবার সাধ্য অনুযায়ী ক্যাম্পসকে সহযোগিতা করা।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, সেবা কার্যক্রম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসারিত করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, তার অংশ হিসেবেই চাঁদপুরে পা দিয়েছে ক্যাম্পস। কিডনি রোগ বিস্তার রোধে সচেতনতা ও প্রচারণা বাড়ানোসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্যাম্পস চাঁদপুরে কাজ করে যাবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, গ্লুমারেলো নেফ্রাইটিস, প্রস্রাব প্রবাহে বাঁধাজনিত রোগ, বয়স্ক পুরুষদের প্রস্টেট বড় হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের নালী সরু হয়ে যাওয়া, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের ব্যবহার, স্থূলতা, ধুমপান এবং যারা কম কায়িক পরিশ্রম করেন।
ডা. সামাদ উল্লেখ করেন, ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের কারণ ও রোগ শনাক্তকরণ নিশ্চিত করে এ ভয়াবহ রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। শতকরা ১৬ থেকে ১৮ ভাগ লোকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ সুপ্ত অবস্থায় থাকে, যার শেষ পরিণতি কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু।
তিনি অকস্মিক কিডনি বিকল প্রতিরোধে সাতটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন, ডায়রিয়া ও বমিজনিত পানি শূন্যতা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, প্রসবকালীন ও দুর্ঘটনাজনিত রক্তক্ষরণ রোধ, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথা ও জীবাণুনাশক ওষধ সেবন না করা, ভেজাল খাদ্য পরিহার, সাপে কাটা ও পোকামাকড়ের কামড়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং বিশুদ্ধ পানি পান করা।
খাদ্য ও পানীয়তে বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহারকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে অধ্যাপক সামাদ বলেন, এ সমস্যার সমাধান কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কারণ বিশ্বের অনেক দেশেই খাদ্য দ্রব্যের ভেজালকে কঠোর হাতে দমন করা সম্ভব হয়েছে। তবে সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আমির জাফর বলেন, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক ব্যাধির কারণে মানুষের কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য, তাই জীবনাচার ও খাদ্যাভাস পরিবর্তন করে এ রোগ প্রতিরোধ করাটাই মুক্তির একমাত্র পথ।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. রথিন্দ্র নাথ মজুমদার, প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, ডায়াবেটিস হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল গফুর, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দীপ কুমার দত্ত।
কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় রোগের কারণ ও রোগ সনাক্ত করে এ ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্যাম্পস।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৪
** চাঁদপুরে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার উদ্বোধন