ঢাকা: যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এ সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর। কারণ আমাদের দেশে প্রায় দেখা যায়, যক্ষ্মায় আক্রান্ত অনেক রোগী নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না ।
পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং সফলতার হার কম বলে এর ভয়াবহতা অনেক বেশী। এছাড়া যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে আরো যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো হলো: শিশুর যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগর ও এইচআইভি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
মঙ্গলবার(১৭ ফেব্রুয়ারি’২০১৫) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারের কনফারেন্স কক্ষে ‘জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি: সকলের অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ব্র্যাক ও একটি জাতীয় দৈনিক যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ যে শুধু অর্থনৈতিকভাবে এগুচ্ছে তা নয়, বরং সমাজিক অগ্রগতিতেও বিস্ময়কর অগ্রগতি লাভ করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে স্বাস্থ্যসূচকে আশাব্যঞ্জক উন্নতির কারণে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সূচকের আর একটি বড় উপাদান হচ্ছে অংশীদারিত্ব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক বলেন, পুষ্টিহীনতা, শহরের বস্তি, ভাসমান এবং নগর ও মহানগরীর জনগোষ্ঠি যক্ষ্মা কর্মসূচির সফলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডায়াবেটিকস, তামাক, অবহেলা, অসচেতনতা এবং অজ্ঞতা।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার প্রতিটি উপজেলায় ডিজিটাল এক্সরে মেশিন স্থাপনের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘জিন এক্সপার্ট’ মেশিন দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এখন আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট যক্ষ্মা। এছাড়া আগামী দিনে আরো যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো হলো কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষ্মা, ফুসফুস বহির্ভূত যক্ষ্মা, শিশু যক্ষ্মা শনাক্তরণে সমস্যা ও দারিদ্রতার কারণে যক্ষ্মার প্রকোপ বৃদ্ধি।
ব্র্যাকের টিবি, ম্যালেরিয়া, ওয়াশ ও ডিইসিসির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাংলাদেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কারণ, শহর ও গ্রামের জনসংখ্যা অসমানুপাত হারে বাড়ছে। শহরের জনসংখ্যা বাড়লেও সেবা প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়েনি।
তিনি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহবান জানান।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- রোগীদের চিকিৎসা সেবায় গাফিলতি, স্বাস্থ্য আচরণবিধি মেনে না চলা, আধুনিক চিকিৎসা উপকরণের অভাব, মানসম্মত ওষুধ না থাকা, চিকিৎসার জন্য স্বতন্ত্র এমডিআর হাপাতালের উদ্যোগ না নেওয়া, প্রাইভেট ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণ না করা, ডটস সেন্টারগুলোর চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে ভালোভাবে প্রচার না করা, গুণগত সেবা নিশ্চিত না করা, জনবুহুল, ভাসমান ও বসতি এলাকায় এলাকায় আশঙ্কাজনক হারে যক্ষ্মা ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি।
২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩ হাজার ৬৯৯ জন ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে।
দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি’র সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. আহমেদ হোসাইন খান, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মোজাম্মেল হক, আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র বিজ্ঞানী ডা. কে জামান, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ডা. এটিএম সানাউল বাশার প্রমূখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫