জামালপুর: জামালপুরে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ৮৫ ভাগ সেবা গ্রহীতা। তবে চিকিৎসকদের সেবার মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) কর্তৃক জামালপুর জেলার স্বাস্থ্যসেবা ও মানের ওপর পরিচালিত এক জরিপের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সুপ্র জেলার ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর জরিপ চালায়।
জরিপকালে তথ্য সংগ্রহের জন্য অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে সামাজিক জরিপে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, তৃণমূল জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় সাংবাদিকরা অংশ নেয়।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা, কর্মদক্ষতা ও কর্মমান নিরূপণ করা এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ জনগনের মধ্যে সচেতনা ও জনমত তৈরির উদ্দেশে এ জরিপ চালানো হয়।
সুপ্রর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে রাতে বেশিরভাগ সময়ই চিকিৎসকশুন্য থাকে। এ সময় নার্সরাও থাকেন না।
জরিপের ৮৫ ভাগ তথ্যদাতা জানান, হাসপাতালের তহবিল ও স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি ভুতর্কি বিষয়ে তারা অবগত রয়েছেন। শতভাগ সেবা গ্রহীতা জানান, সরকারি হাসপাতালেও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষায় জন্য তাদের টাকা দিতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর পরিচালিত জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যথেষ্ট চিকিৎসক থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য কর্মচারীর ঘাটতি রয়েছে।
এসব কেন্দ্রে মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সেবা অপ্রতুল এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কোনো তালিকা নেই। বাজেট কম থাকায় সঠিক সেবা দিতে পারে না।
এছাড়া প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো নেই। তবে প্রয়োজনীয় সচল অ্যাম্বুলেন্স ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে।
তথ্যদাতারা জানান, চিকিৎসকের জন্য তাদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। তবে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সব ওষুধ তারা পান না।
উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রর সেবার মান উন্নয়নে প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়। এগুলো হলো, উপরিকাঠামোর দুর্বলতা দূর করা, সেবা ও সেবা প্রদানের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের পরিচয়, সেবা সর্ম্পকে সঠিক তথ্য প্রদান, জনবল নিয়োগ, পর্যাপ্ত বাজেট নিশ্চিত করা ও মনিটরিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা।
জরিপে জেলার কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পর্কে যে তথ্য উঠে এসেছে তা হলো, কমিউনিটি ক্লিনিকে শুধু জ্বর, ঠাণ্ডা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এসব ক্লিনিকে নবজাতকের জন্য সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে বিভিন্ন প্রতিষেধকের ব্যবস্থা রয়েছে। ওষুধের মধ্যে সর্দি কাশি, জ্বর ও ডাইরিয়া ওষুধ ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে এসব কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
তবে সেবা গ্রহণকারীদের শতভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবামানের উন্নয়নে যে সুপারিশ করা হয় তা হলো, নবজাতকের সেবা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতির ব্যবস্থা, কমিউনিটি ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট কমিটির মিটিং নিয়মিত করা, সেবার মান বহুমুখী করা, জনগণকে সচেতন করে তোলা, গ্রহীতাদের কমিউনিকিট ক্লিনিক সর্ম্পকে আস্থা তৈরি ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র সম্পর্কে জরিপের জন্য ২ জন পুরুষ ও ২ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের তথ্যমতে, এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মা ও শিশু এবং প্রসুতি সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা উপকরণ ও পর্যাপ্ত কর্মচারী নেই।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা উপকরণ, পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মচারী, ওষুধ, বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদানকারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা ও পরিবেশ-পরিচ্ছন্ন রাখার সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫