ঢাকা: সম্প্রতি ৩টি গ্রুপের ৫১ টি ওষুধ নিষিদ্ধ করা হলেও তা তুলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। ফলে বিরাট ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন ওষুধ বিক্রয়কারীরা।
সম্প্রতি রেনাটা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, অপসোনিন, বেক্সিমকো, দ্য ইবনে সিনাসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির উৎপাদিত প্যারাসিটামল, পায়োগ্লিটাজন ও রসিগ্লিটাজন গ্রুপের ৫১টি ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একই সঙ্গে বাতিলকৃত ওষুধসমূহের উৎপাদন, ক্রয়, বিক্রয়, বিতরণ, মজুদ ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত ওষুধ ফেরত নেয়নি। এ অবস্থায় ফার্মেসিগুলো পড়েছে বিপাকে। একদিকে প্রশাসনের তল্লাশির কারণে তাদের পড়তে হচ্ছে জরিমানায়, অন্যদিকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিরাট ক্ষতির।
শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ওষুধ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসন ৫১ টি ওষুধ নিষিদ্ধ করলেও তার বিক্রি থেমে নেই। তবে তা চলছে লুকিয়ে।
ক্রেতা সেজে এ প্রতিবেদক নিষিদ্ধ ওষুধগুলো বিভিন্ন দোকানে ক্রয় করতে গেলে কোনো বিক্রেতাই প্রেসক্রিপশন ছাড়া তা দিতে রাজি হয়নি। কোনো কোনো দোকানী আবার মুখপানে সময় নিয়ে চেয়ে দেখলেন। প্রতিবেদক আবার প্রশাসনের লোক কি না, তা বুঝতেই দোকানী এমনভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, সে আর বুঝতে অসুবিধা হলো না।
অগত্যা নিজের প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ নিয়ে ভাব জমানো গেল আল-আমিন ফার্মেসির বিক্রেতা মো. সুমন পাঠানের সঙ্গে।
তিনি জানান, সোমবার শাহবাগের এই মার্কেটে ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলো। অনেককে নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির দায়ে জরিমানাও করেছে। তাই আজ আর কেউ মুখ খুলছে না। তবে নিষিদ্ধ ওষুধগুলো এখনো রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ফার্মেসিতেই প্রায় কোটি টাকার নিষিদ্ধ ওষুধ রয়েছে। এখন এগুলো ফেরত না নিলে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুণতে হবে দোকানীদের। প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে ফেরত নিতে বলা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো সাড়া দিচ্ছে না। একদিকে প্রশাসনের চাপ অন্যদিকে কোম্পানির অসহযোগিতার কারণে বিরাট ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আফতার ওষুধ সেন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানী বলেন, অনেক ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোম্পানি ফেরত নেয়নি। এখন সেগুলো ফেরত না নিলে লোকসানে পড়তে হবে।
নিশাত মেডিসিন সেন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানী জানান, নিষিদ্ধ হওয়ার ওষুধগুলো বিক্রি করা হচ্ছে না। কিন্তু কোম্পানিগুলোও তো তা ফেরত নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি’র (বিসিডিএস) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ডেপুটি সেক্রেটারি বাংলানিউজকে বলেন, যত খড়ক শুধু আমাদের উপর। প্রশাসন ৫১টি ওষুধ বাতিল করলো ঠিকই কিন্তু সমস্যায় পড়তে হলো কেবল ফার্মেসি মালিকদের। যারা এসব নিম্নমানের ওষুধ বানাচ্ছে, তাদের সরকার বা প্রশাসন কিছু বলছেন না। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে এসব ওষুধ তুলে নিতে বাধ্য করা।
সাবেক (সর্বশেষ কমিটির) সহ-সভাপতি আব্দুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, ওষুধ প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য এতো অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের যোগসাজসের কারণেই কোম্পানিগুলো পার পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ওষুধ মার্কেটে তল্লাশি চালিয়ে কোনো লাভ নেই। আগে নিম্নমানের ওষুধের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। কেননা, আমরা কোম্পানির কাছ থেকে টাকা দিয়েই ওষুধ ক্রয় করি। তারা উৎপাদন না করলে এসব বিক্রিও হবে না।
বেড়ায় যদি ক্ষেত খায় তা ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি করে মন্তব্য করে আব্দুল হাই বলেন, অনেক সময় নিম্ন মানের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওষুধ প্রশাসনে নালিশও দেওয়া হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে। কিন্তু অসাধু কর্মকর্তারা সে বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে আমাদের নাম বলে দিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন সময় জীবনের হুমকিও আসে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত ওষুধসমুহ হলো- রেনাটা লিমিটেড, মিরপুর ও রাজেন্দ্রপুরের প্যারাডট ট্যাবলেট, মিরপুরের পায়োগ্লিন ৩০ ট্যাবলেট, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এইস সফট ট্যাবলেট, টস-৩০ ট্যাবলেট, টস-৪৫ ট্যাবলেট, সেনসুলিন ২ ট্যাবলেট, বেক্সিমকো ফার্মার নাপাসফট ট্যাবলেট, পায়োগ্লিট ৩০ ট্যাবলেট, পায়োগ্লিট ৪৫ ট্যাবলেট, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের ফিভিমেট ট্যাবলেট, পায়োজেনা ৩০ ট্যাবলেট, রোমেরল ২ ট্যাবলেট, রোমেরল ৪ ট্যাবলেট, দ্য একমি ল্যাবরেটরিজের ফাস্ট-এম ট্যাবলেট,
বায়োফার্মার এসিটা সফট ট্যাবলেট, প্রিগলিট-৩০ ট্যাবলেট, অপসো স্যালাইনের জিসেট ট্যাবলেট, অপসোনিন ফার্মার রেনোমেট ট্যাবলেট,পাইলো ৩০ ট্যাবলেট, এসকেএফ’র টেমিপ্রো ট্যাবলেট, ইউনিমেড অ্যান্ড ইউনিহেলথ’র একটোস ৩০ ট্যাবলেট, এসিআই লিমিটেডের ডায়াট্যাগ ৪৫ ট্যাবলেট, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালসের রসিগ্লিট ২ ট্যাবলেট, রসিগ্লিট ৪ ট্যাবলেট, এরিস্টোফার্মার গ্লুকোরস ২ ট্যাবলেট, গ্লুকোরস ৪ ট্যাবলেট, গ্লুকোজন ৩০ ট্যাবলেট,
ডেল্টা ফার্মার রসিট-৪ ট্যাবলেট, মিল্লাত ফার্মার পায়োট্যাব ৩০ ট্যাবলেট, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের পায়োডার ৩০ ট্যাবলেট, কেমিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওগলি ৩০ ট্যাবলেট, ট্যাজন -৪ ট্যাবলেট, ডক্টরস কেমিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেডের পায়োজন ৩০ ট্যাবলেট, অ্যালকো ফার্মার পায়োলিট ৩০ ট্যাবলেট, দ্য হোয়াইট হর্স ফার্মার লিট-৩০ ট্যাবলেট, আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যালসের পিজোবেট ৩০ ট্যাবলেট,
নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডায়াটাস ৩০ ট্যাবলেট, শরীফ ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারামিন ট্যাবলেট, পিগজন ৩০ ট্যাবলেট, সোমাটেক ফার্মাসিউটিক্যালসের একটেল-এম ট্যাবলেট, লিওন ফার্মাসিউটিক্যালসের মেটেস ট্যাবলেট, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালসের পামিক্স এম ট্যাবলেট, নোভেল্টা বেস্টওয়ে ফার্মাসিউটিক্যালসের নরসফট ট্যাবলেট, প্যাসিফিক ফার্মাসিউটিক্যালসের পিগ্লিট ৩০ ট্যাবলেট, রগ্লিট ৪ ট্যাবলেট ও মেডিমেট ফার্মা লিমিটেডের ডায়াপায়োট্যাব ৩০ ট্যাবলেট।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৫
ইইউডি/এনএস