রাজশাহী: উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিনটি বিকল হয়ে আছে গত চার বছর ধরে। তাই হাসপাতালে আসা রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য অতি জরুরি এই পরীক্ষাটি করাতে হচ্ছে মেডিকেলজোন খ্যাত লক্ষ্মীপুরসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
জরুরি এই মেশিনটির জন্য কর্তৃপক্ষ চিঠি চালাচালি করছে চার বছর ধরেই। তবে এটি মেরামতের জন্য নিয়ম অনুসরণ করতে অনেক সময় লাগলেও নতুন মেশিন বরাদ্দ পাওয়ার কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের জন্য শিগগিরই একটি নতুন সিটি স্ক্যান মেশিন পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি কর্তৃপক্ষের।
ভ্যানে করে মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালের বাইরে টেনে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো দুর্ভোগের ও ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালে পরীক্ষাটির সুবিধা থাকলে রোগীর খরচ হয় দুই হাজার টাকা। অথচ মেশিন বিকল থাকায় হাসপাতালের বাইরে রোগীকে গুনতে হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
সম্প্রতি হাসপাতালের ফটকে কথা হয় রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক নূরুল আমিনের সঙ্গে। তার মামা অটোরিকশা থেকে নামার সময় পেছন থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দেয়। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মাথার সিটি স্ক্যান করাতে বললেও মেশিন নষ্ট থাকায় তা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে মামার মাথার সিটিস্ক্যান করাতে হয় তিন হাজার টাকায়। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে এতোবড় হাসপাতাল আর দ্বিতীয়টি নেই। সেখানে সিটি স্ক্যানের মতো জরুরি এই মেশিনটি কেনো সচল থাকবে না বাংলানিউজের কাছে ক্ষোভ জানান তিনি।
এদিকে, হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) কিংবা মাথায় আঘাতজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় যেসব রোগী হাসপাতালে আসেন, তাদের সিটিস্ক্যান করাতে লিখে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিনটি ২০০৫ সালে কেনা হলেও ২০১১ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে তা বিকল হয়ে যায়। সেই থেকে পড়ে আছে মেশিনটি।
ওই সময় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এটি মেরামতের জন্য ৩১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের হিসাব দেয়। তখন নতুন যন্ত্র নিতে হলেও পাঁচ কোটি টাকার প্রয়োজন। নিয়মানুযায়ী, পুরান যন্ত্র মেরামতের জন্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রাক্কলিত ব্যয় অনুমোদন করাতে সরকারের ন্যাশনাল ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইক্যুপমেন্ট ওয়ার্কশপের (এনইএমইডব্লিউ) অনাপত্তিপত্রের প্রয়োজন পড়ে। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রথমে সরকারের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপার্টমেন্টে (সিএমএসডি) চিঠি দেয়।
সেখান থেকে চিঠির একটি অনুলিপি এই বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য এনইএমইডব্লিউতে পাঠানো হয়। তাদের অনাপত্তি পেলেই মেরামতের বরাদ্দ মেলে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে একাধিক চিঠি পাঠানো হলেও এই ওয়ার্কশপ রহস্যজনক কারণে কোনো চিঠিই পায়নি। ফলে মেশিনটি পড়েই থাকে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন জানান, গত ২ জুন পুরান যন্ত্রটি মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে নতুন করে আবার প্রাক্কলন ব্যয় চেয়েছে এনইএমইডবিøউ। এখন আবার শুরু থেকে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। তবে নতুন একটি সিটিস্ক্যান মেশিন পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই তা স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
এসএস/জেডএস