ঢাকা: স্মার্টফোন থেকে নবজাতকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, তাদের বৃদ্ধি এবং টিকা সংক্রান্ত তথ্যসেবা নিয়ে নতুন বাবা-মায়েদের জন্য বিশেষ একটি মোবাইল অ্যাপ ‘মাম্মি’স বুক’ অবমুক্ত করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড। একই সঙ্গে শিশুদের মেনিনগোকোক্যাল রোগ থেকে নিরাপদ রাখেতে বাজারে এনেছে প্রতিষেধক টিকা ‘মিনাকট্রা’।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে এক সিম্পোজিয়ামে অ্যাপস ও ওষুধটি অবমুক্ত করেন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডা. এম আর খান। বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি ওবের, বিএসপিআইডি’র সভাপতি প্রফেসর ডা. মনজুর হোসাইন, বারডেমের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাজমুন্নাহার, বিপিএ’র সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং বিপিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ডা. এম এ কে আজাদ চৌধুরী সিম্পোজিয়ামে বিশেষ অতিথি ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গুগল প্লে-স্টোরে সবার জন্য বিনামূল্যে ব্যবহারের সুবিধার্থে মাম্মি’স বুক অ্যাপটি বিএসপিআইডি অনুমোদিত টিকা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শিশুকে কখন কোন টিকা দিতে হবে সে বিষয়ে আগাম বার্তা দেয়। জন্ম-তথ্য নিবন্ধনের মাধ্যমে একাধিক শিশুর ওজন, বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য দেয়। এছাড়া অল্পদিনের মধ্যেই প্রয়োজনে এই অ্যাপসের মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।
শিশুদের মেনিনজাইটিস সংক্রমণ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে দেশের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ইনফেক্সাস ডিজিজেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিআইডি)। সিম্পোজিয়ামে দেশের আড়াইশ’ শীর্ষস্থানীয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। তারা শিশুদের ইনভেসিভ মেনিনগোকোক্যাল ডিজিজ (আইএমডি) রোগ সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দিন দিন এ পরিস্থিতি আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে।
মেনিনগোকোক্যাল এক ধরনের সংক্রমণ যা ব্যাকটেরিয়াম ন্যেসিরিয়া নামক জীবানুর দ্বারা ঘটে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি হলেও টিকা প্রদানের মাধ্যমে এর প্রতিরোধ সম্ভব।
সিম্পোজিয়ামে চিকিৎসকরা বলেন, এ ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য খুবই কম সময় হাতে পাওয়া যায়।
বিএসপিআইডি’র সভাপতি প্রফেসর ডা. মনজুর হোসাইন তার বক্তব্যে বলেন, মেনিনজাইটিসের কারণে রক্তে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে যার ফলাফল সেপসিস। সেপসিস আরো ভয়ঙ্কর, এমনকি প্রাণঘাতীও। উন্নত-অনুন্নত দুই ধরনের দেশেই রোগীর দুর্বলতা, মৃত্যু এবং প্রতিবন্ধিত্বের অন্যতম কারণ মেনিনজাইটিস। মেনিনগোকোক্যাল টিকা নিলে উন্নত দেশের মতো অনুন্নত দেশগুলোতেও এ রোগের প্রকোপ কমে আসবে।
অন্যান্য মেনিনজাইটিস রোগের মতোই আইএমডি বা মেনিনগোকোক্যালের লক্ষণও একই রকম বলে একে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা কঠিন বলে উল্লেখ করেন চিকিৎসকরা।
সিম্পোজিয়ামের আলোচনায় তারা বলেন, প্রথম ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুর ভেতর এ রোগের অনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা হঠাৎই তাদেরকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা করা হলেও অনেক সময়ই তাদের মৃত্যু ঠেকানো যায় না। আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে থাকা শিশুদের প্রতি দশজনে ২ জন প্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয় বলেও উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে ঝুঁকি না নিয়ে শিশুকে টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
সিম্পোজিয়ামের প্রধান অতিথি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যেখানে চিকিৎসার সুযোগ সীমিত এবং রোগীদেরই চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয়, সেখানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত সমাধান। পোলিও, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশির মতো রোগ টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ নেওয়ার ফলে সাফল্যের মুখ দেখেছে বলে সিম্পোজিয়ামে উদাহরণ টানেন এম আর খান।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি ওবের বিএসপিআইডি ও সানোফিকে এ ধরনের সিম্পোজিয়ামের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, শিশুরা দেশের ভবিষ্যত, যেকোনো জাতির শিকড়। তাদের সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানবতাবাদী যেকোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে ফ্রান্স সব সময়ই সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছে। সানোফি বাংলাদেশও সমাজের কল্যাণে তাদের বিশ্বমানের ওষুধ বাংলাদেশের বাজারে নিয়ে এসে মানবতাবাদী সেই দর্শনের চর্চা করছে দেখে আমি গর্বিত।
সানোফির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রিয়াদ মামুন প্রধানী বলেন, সানোফি বিএসপিইডি’র এ উদ্যোগের সঙ্গে থাকতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।
সিম্পোজিয়ামের সায়েন্টিফিক সেশনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সমীর কুমার সাহা ‘আপডেট মেনিনগোকোক্যাল ডিজিস: প্রিভেনশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৫
এএসআর