ঢাকা: চাকরির ক্ষেত্রে আন্তর্জতিক মানের কোর্সের ভালো চাহিদা থাকলেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সঙ্গে চাকরিতে সম সুবিধা পাচ্ছেন না তারা।
তুলনামূলক আধুনিক কোর্স সম্পন্ন করেও সরকারি চাকরিতে প্রবেশাধিকার না থাকায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ-হতাশা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কোর্স চালুর পর থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। ফলে কোর্স সম্পন্নকারীরা ছাড়াও এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কারিগরি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ২০০৫ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কোর্স সম্পন্ন করে প্রতি বছর ১৫ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বের হলেও সরকারি চাকরিতে আবেদনের সুযোগ পান না তারা।
অথচ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও ক্লিনিকগুলোতে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সের উপদেষ্টা ডা. নূর এ মোজাম্মেল বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানে ৬৭টি টেকনোলজির কোর্স করানো হয়। এর মধ্যে মেডিকেল টোকনোলজিও একটি। উন্নত বিশ্বে কারিগরি শিক্ষার অধীনেই থাকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, কারিগরির পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৭৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখান থেকে সাড়ে তিন হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বের হচ্ছেন।
ডা. নূর এ মোজাম্মেল অভিযোগ করেন, কারিগরির অধীনে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা দক্ষ হলেও তাদের সঙ্গে চাকরির ক্ষেত্রে বিমাতা সূলভ আচরণ করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী সাতটি মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স এবং এক বছর ও ছয় মাস মেয়াদী দু’টি ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। এর বাইরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেল টোকনোলজির উপর কোর্স চালু রয়েছে।
ল্যাবরেটরি, নার্সিং, ফার্মেসি, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপি, ইন্টিগ্রেটেড, রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং- এসব মেডিকেল টেকনোলজির চার বছর মেয়াদী কোর্সগুলোতে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া হয়। এই কোর্সের আওতায় তিন বছর তাত্ত্বিক ক্লাস এবং এক বছর ইন্টার্নি করার সুযোগ রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের।
প্রতি বছর এসব কোর্সে ১৫ হাজারের বেশি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বের হচ্ছেন, যারা সরকারি চাকিরর বৈষম্যের শিকার। অথচ দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় দুই লাখের মত মেডিকেল টেকনোলজিস্টের চাহিদা রয়েছে।
এদিকে কারিগরির অধীনে ডিপ্লোমা ইন আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং সার্টিফিকেট ইন আল্ট্রাসনোগ্রাম কোর্সে এক বছর ও ছয় মাস মেয়াদে ভর্তি করানো হয়। সাধারণত মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এবং চিকিৎসকরা স্বল্প মেয়াদী এই দুটি কোর্সে ভর্তি হন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সবার ক্ষেত্রে একই নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত। ছেলে-মেয়েরা কারিগরি বোর্ডের অধীনে চার বছর কোর্স সম্পন্ন করার পরে চাকরিতে প্রবেশাধিকার না পাওয়াটা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব সুবোধ চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, বৈষম্য নিরসনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালেয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিষয়টি শিগগিরি নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ১৫, ২০১৫
এমআইএইচ/এটি