ঢাকা: গত এক দশকে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী (প্রতি হাজারে) শিশু মৃত্যুর হার ৮১ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। অন্যদিকে, পাকিস্তানে শিশু মৃত্যুর এই হার বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু মৃত্যুর হার ও বিগত দশকে এর পরিবর্তনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ’র উপর এক গবেষণাপত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এর সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (সিপিআর) এর ১২তম গবেষণা পুস্তিকা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
আইইউবিএটি’র ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিলের সদস্য ও গবেষণা পুস্তিকার লেখক কানাডার সায়মন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসির অধ্যাপক ড. জন রিচার্ডস গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ২০০০ সালে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা কর্মসূচি শুরুর পর থেকে ৭৭টি উন্নয়নশীল দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার পরিবর্তনের কারণগুলো নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়।
অধ্যাপক ড. জন রিচার্ডস বলেন, চলতি শতকের প্রথম দশকের (২০০০-২০০৩) প্রথম বছরগুলোতে বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৮১ জন শিশু পাঁচ বছরের আগেই মারা যেত। কিন্তু বর্তমানে (২০১০-১৩) হ্রাস পেয়ে তা ৪৫ জনে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে শিশু মৃত্যুর একটি তুলনামূলক পার্থক্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ সর্বনিম্নের দিক দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। তবে সর্বনিম্ন শিশু মৃত্যুর হার শ্রীলঙ্কায়, সেখানে গত এক দশকে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানে শিশু মৃত্যুর এই হার ১০ বছরে ১০৯ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে। এছাড়া নতুন তথ্য অনুসারে ভুটানে প্রতি হাজারে ৩৯ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যায়, নেপালে ৪২ ও ভারতে ৫৬ জন শিশু মারা যায়।
এই গবেষণা পত্রে বলা হয়, টিকাদান ও জন্মহার এই দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য চারটি দেশ থেকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা প্রদানে তেমন ভাল করতে পারেনি।
এতে আরো বলা হয়, যে সব পরিবারে শিশুর সংখ্যা অধিক সেগুলো মূলত দরিদ্র পরিবার। এসব পরিবারেই শিশু মৃত্যুর হার বেশি। বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনায় অর্জন প্রশংসনীয়। সরকার, নাগরিক ও ধর্মীয় সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে নিয়োজিত।
গবেষণায় আরও বলা হয়, যেসব দেশে নারী শিক্ষার হার কম সেসব দেশে শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রমাণিত যে যে সব দেশের মা লিখতে ও পড়তে পারেন তাদের সন্তানরা স্বাস্থ্যবান। বাংলাদেশে ৫৫ শতাংশ নারী শিক্ষিত।
অনুষ্ঠানে আইইউবিএটি’র প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলিমউল্যা মিয়া বলেন, আমাদের মুসলিম প্রধান দেশে পরিবার পরিকল্পনার অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। এই সাফল্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। একই সাথে সব প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সুশাসনের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রতি ২৫ হাজার মানুষের জন্য একজন সেবিকা থাকা দরকার, যা শ্রীলঙ্কায় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি ৫০/৬০ হাজারে এক জন সেবিকা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
টিএইচ/আরআই