ময়মনসিংহ : অনেকটা শূন্যই হাতেই শুরু করেছিলেন তিনি। সম্বল ছিল অদম্য ইচ্ছা আর নিরলস শ্রম।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিখ্যাত অ্যাপেলো হাসপাতালও তার গড়া প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার মান স্বীকার করে নিয়েছে। তিনি মনসুর আলম চন্দন। স্বপ্নবাজ উদ্যমী এ মানুষটি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই ফলিয়েছেন সোনা। ফলে তাকে নিয়ে কৌতূহলেরও শেষ নেই অনেকেরই।
মাত্র ২৩ বছর আগে এক উপশম প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে কীভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক হলেন, জীবনের ভাগ্যের চাকা ঘুরালেন, দীর্ঘদিন ধরেই এমন সব প্রশ্নও উঁকি মেরে আসছে শহরের ক্লিনিকপাড়া থেকে শুরু করে সচেতন মানুষের মাঝেও। এ নিয়ে প্রপাগান্ডারও কমতি নেই।
অবশেষে রোববার (০১ নভেম্বর) রাতে শহরের সোহাগ পার্টি সেন্টারে নিজের মালিকানাধীন বিশেষায়িত প্রান্ত স্পেশালাইজ হাসপাতালের ১ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বাংলানিউজের এ স্টাফ করেসপন্ডেন্টের এক প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসা সেবা ব্যবসায় নিজের বন্ধুর সময় থেকে শুরু করে সাফল্যের শিখরে পৌছার অজানা গল্প বললেন তিনি। একই সঙ্গে ভেদ করলেন নিজের উত্থান রহস্যও।
১৯৯২ সালের গোড়ার দিকে সমমনা বন্ধুদের নিয়ে নগরীর ব্রিজ মোড় এলাকায় উদ্যমী তরুণ মনসুর আলম চন্দন প্রথমে গড়ে তুলেন উপশম প্রাইভেট হাসপাতাল। সেখানেই ছিল ময়মনসিংহের প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। নানা কারণে এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান নিয়ে খুব একটা সফল হতে পারেননি।
এরপরই শুরু হয় চ্যালেঞ্জ। জীবন জয়ের যুদ্ধ। তিনি ধর্ণা দিতে থাকেন বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে। ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই ঋণ হিসেবে তাকে ২০ লক্ষ টাকা দেয়। ঋণের এ টাকাতেই নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন প্রান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
চন্দন জানান, এ সময় তিনি একটি সিটি স্ক্যান মেশিন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলাপ করেন এক চিকিৎসকের সঙ্গে। চিকিৎসক তাকে বলেন, তুমি পাগল হয়েছো নাকি, তোমার বাবার টাকা বেশি হলে কিনো! চিকিৎসকের এমন নিরুৎসাহী কথায় দমে যাননি চন্দন।
মায়ের জমি বিক্রি করে আর অন্য এক ব্যবসা থেকে উপার্জিত অর্থে কেনেন বহুল প্রত্যাশিত সিটি স্ক্যান মেশিন। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে তোলা এ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ক্রমশ সুনাম অর্জন করে। একদিনের জন্যও তার গায়ে ব্যাংকের ঋণ খেলাপী তকমা লাগেনি।
এ ব্যবসায়ীর ভালো দিকগুলো লক্ষ্য করে পরবর্তীতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক তার কাছে আসে এবং তাকে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এসব নিয়ে আলোচনা গড়ায় বহুদূর।
অত:পর ইসলামী ব্যাংক তাকে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এরপর হাসপাতালের উপকরণ বিক্রিকারী সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠান তাকে দেয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি চন্দনকে। গড়ে উঠে প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক, অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সম্মানে নৈশ ভোজ অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহের চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানের রোল মডেল মনসুর আলম চন্দন আরো বলেন, অনেকেই বলে আমি কীভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলাম। কীভাবে প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতালের মালিক হলাম?
সেই গল্পের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ইসলামী ব্যাংক ও বিদেশি স্বাস্থ্য উপকরণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আমার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে। জায়গার মালিক আরেক বন্ধুর সঙ্গে ফিফটি ফিফটি চুক্তিতে ডেভেলপারের মতো বহুতল ভবন গড়ি।
১০ বছর পর ওই ভবনের অর্ধেকের মালিক হবেন তিনি। এ ১০ বছর তিনি তাকে ভাড়া দিয়ে যাবেন বলেন প্রান্ত স্পেশালইজড হাসপাতালের এ কর্ণধার।
গত এক বছরে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও দু:স্থ্যদের প্রান্ত স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথাও তুলে ধরেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আলম চন্দন। ময়মনসিংহের সাংবাদিকরাও তার কর্মজীবনের নানা দিক তুলে ধরে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
নিয়ামুল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক মো: শামসুল আলম খান, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউল করিম খোকন, সিটি প্রেসক্লাব সভাপতি আইয়ুব আলী, সাধারণ সম্পাদক মতিউল আলম, সাংবাদিক মীর গোলাম মোস্তফা, সাইফুল ইসলাম, মাটি ও মানুষ সম্পাদক আশিক চৌধুরী, মকবুল হোসেন বকুল, শেখ মহিউদ্দিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্ববর ২, ২০১৫
এমএএএমকে/ এমআইকে/জেডএম