ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

একবছরে এইচআইভি শনাক্তে ৬৭ হাজার ৮৭০ পরীক্ষা

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
একবছরে এইচআইভি শনাক্তে ৬৭ হাজার ৮৭০ পরীক্ষা

ঢাকা: দেশে গত একবছরে (২০১৪ নভেম্বর-২০১৫ অক্টোবর) এইচআইভি (হিউম্যান ইমুনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস) ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের জন্য ৬৭ হাজার ৮৭০ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সাতটি মেডিকেল কলেজ, ১২টি সরকারি হাসপাতাল ও তিনটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে বিনামূল্যে এ পরীক্ষা করা হয়েছে।



একবছরে রেকর্ডসংখ্যক এই পরীক্ষা হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। বেসরকারি তহবিলের যেমন অভাব দেখা দিচ্ছে, তেমনি বাড়ছে না সরকারি বরাদ্দও। এ কারণে ভবিষ্যতে এইচআইভি শনাক্ত পরীক্ষাও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যে কারণে এইডস রোগী (এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত রোগ) চিহ্নিত করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
 
এ বিষয়ে আলাপ করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক (এনএএসপি প্রোগ্রাম ম্যানেজার) ডা. মো. আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত একবছরে রেকর্ডসংখ্যক এইচআইভি শনাক্ত পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি অর্থায়ন কমে যাচ্ছে। এতে এ পরীক্ষা ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে। ফলে এইডস রোগী চিহ্নিত বা তাদের চিকিৎসা করাও যাবে না।
 
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এইডস সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরবেন অনুষ্ঠানে।
 
আনিসুর রহমান বলেন, প্রতিটি পরীক্ষা করতে ৬-৭শ’ টাকা খরচ হয়। অর্থায়ন কমে গেলে পরীক্ষা করা যাবে না। এতে শনাক্ত করা যাবে না রোগীও।

তিনি বলেন, বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ হলেও সরকারি অর্থায়ন বাড়েনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন যেখানে বাড়ছে, সেখানে আমাদের কমছে।
 
‘সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করতো ইউএসএআইডি। বছরে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিতো তারা। এবার দু’বছরের জন্য দিয়েছে ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ’

‘প্রতিবছর সহায়তা পাওয়া যেতো প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারি ফান্ড থেকে খরচ হতো। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি টাকা এইডস রোগ প্রতিকারে খরচ হতো। ’
 
‘দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরীক্ষা, কাউন্সেলিং, চিকিৎসার ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে। ’
 
আনিসুর রহমান জানান, বেসরকারি সংস্থা গ্লোবাল ফান্ড ২০১২ সালে এইচআইভি পজেটিভ রোগীদের ওষুধ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সেসময় থেকে সরকার বিনামূল্যে রোগীদের ওষুধ দিয়ে যাচ্ছে।
 
‘প্রতিবছর ১০-১২ কোটি টাকার ওষুধ দেওয়া হয়। মে মাস থেকে ১২টি সরকারি মেডিকেলে টেস্ট হচ্ছে। ৫টি মেডিকেলে টেস্টের সঙ্গে কাউন্সেলিং, চিকিৎসা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ওষুধ। বিদেশি সহায়তা কমলেও এইডস প্রতিকারে সরকার প্রতিশ্রুতিবন্ধ। সেজন্য সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তবে অর্থায়ন আরও বাড়ানো দরকার। ’
 
এ কর্মকর্তা বলেন, এইচআইভি পরীক্ষায় পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রায় এক হাজার ৪৭০ জন রোগীকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রতি মাসে ৫-৭ হাজার টাকার ওষুধ দিতে হয়।
 
সম্প্রতি পরিচালিত একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধারা ধরে না রাখতে পারলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে এ রোগের ঝুঁকি বাড়বে।
 
তবে আশার কথা উল্লেখ করে আনিসুর রহমান জানান, বাংলাদেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার ০.১ শতাংশ, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর (যৌনকর্মী, সিরিঞ্জ দিয়ে মাদকসেবনকারী) মধ্যে ১ শতাংশের কম।
 
তিনি আরও জানান, ১৯৮৯ সালে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩ হাজার ৬৭৪ জন এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে এইডস রোগে মারা গেছেন মোট ৫৩৩ জন। ২০১৪ সালে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩৩ জন, আর এর ফলে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯১ জন। নতুন সংক্রমিতদের মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী (গৃহিণী) ও ৩১ শতাংশ অভিবাসী।  
 
ইউএনএইডস’র তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৯শ’। ১৯৮৯ সালে কক্সবাজারে প্রথম এইচআইভি পজেটিভ রোগী পাওয়া যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
আরইউ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।