ঢাকা: হাত ও হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা, পায়ের নিচের অংশ অবশসহ কয়েকটি জটিল সমস্যায় রয়েছেন ইউনুস আলী (৬৫)। আর্থিক সংকটের কারণে গাজীপুর সদর বা ঢাকায় এসে চিকিৎসা সেবা নেওয়া সম্ভব নয়।
শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) কালীগঞ্জের এ বিদ্যালয়টিতে স্থানীয় সাধারণ মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে এ এইচ মেমোরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড নামে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল। শুধুমাত্র চিকিৎসাই নয় বিনামূল্যে হৃদরোগ, জয়েন্ট পেইন, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধও সরবরাহ করছে তারা।
যেখানে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে টাকা ছাড়া চিকিৎসা পাওয়াই কষ্টকর সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি পথ্য পেয়ে সন্তুষ্ট এই এলাকার বাসিন্দারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতালটি সারাবছরে আশাপাশের আরও পাঁচটি বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসার এসব প্রচারে দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানালেন হাসপাতালের ফ্রন্ট ডেস্ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার।
মৌসুমী বাংলানিউজকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিনামূল্যের এ চিকিৎসা সেবা চলে। আর এসব চলে হাসপাতালটির প্রধান নির্বাহীর তত্ত্বাবধানে। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় শতাধিক রোগী পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে বসা চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বের হয়েছেন রোজিনা ইসলাম নামে এক নারী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘পোলাডার দুইদিন ধইরা জ্বর, তাই হকালেই এইহানে নিয়া আইছি। কালীগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) যায়া টিটমেন্ট পাওয়া ম্যালা ঝামেলা। এহানথে ফ্রি ওষুধও দিছে’।
হাসপাতালটির বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ দেওয়া প্রসঙ্গে উপস্থিত প্রধান নির্বাহী ডা. এস কে এম মিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে অনেক সময়ই ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। এ এইচ মেমোরিয়াল হসপিটাল এই এলাকার মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে। যা এটির মাদার প্রতিষ্ঠান তাদের সামাজিক দায়িত্বেরই অংশ হিসেবেই দেখছে।
কথা শেষ করে তিনি এই বিদ্যালয় থেকে নিয়ে গেলেন দেড়-দুই কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। যেতে যেতে হাসপাতালের নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ড, বিশেষ নকশায় নির্মিত হাসপাতাল ও এর পরিবেশ সম্পর্কে নানা বিষয় বিস্তারিত জানালেন।
মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের আগেই চোখে পড়লো চারতলা ভবনটি। প্রবেশ করতেই দেখা গেলো ছোট ছোট গাছপালা সমৃদ্ধ সবুজ একটি মাঠ। ভেতরে যেতেই ডানপাশে একটি কক্ষে রিসিপশন, যেখানে দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন কর্মী। রিসিপশন থেকে বের হয়ে একে একে চিকিৎসকদের কক্ষ, জরুরি চিকিৎসা রুম, রোগীদের আধুনিক শয্যা, অত্যাধুনিক ল্যাব, দোতলায় ছোট সার্জারির রুম ঘুরিয়ে দেখালেন। যার প্রত্যেকটিই মনে করিয়ে দেয় রাজধানী ঢাকার আধুনিক হাসপাতালের কথা।
মিরাজুল ইসলাম এর মধ্যে জানালেন হাসপাতালটি যেহেতু পুরোপুরি ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত, সেজন্য একেবারেই বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে যথেষ্ট কম খরচে এখানে হৃদরোগ, কিডনি, অর্থোপেডিক্স, গাইনিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক), জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের দশজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ সেবা দেয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব চিকিৎসক রয়েছেন পাঁচজন।
আবার এ প্রতিষ্ঠানটির ল্যাব সুবিধাও অত্যাধুনিক বলে তিনি জানান। এছাড়া রয়েছে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা ও ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি সেবা। শুধু তাই নয় হাসপাতালটির চারতলায় চিকিৎসকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আবাসন ব্যবস্থাও।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক পাঠিয়েও রাখা যায় না। এর একটি বড় কারণ হলো আবাসন সমস্যা ও নিরাপত্তা সংকট। এ সমস্যা মাথায় রেখেই শহর থেকে দূরের এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসকদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক বেসরকারি হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে, তেমনি প্রশ্ন রয়েছে তাদের মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি নিয়েও। অন্তত সেদিক থেকে আলাদা মাত্র দেড় বছর বয়সী এ এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল লিমিটেড।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
এইচআর/আইএ