ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

গুগল ডাক্তারে স্বাস্থ্যের ঝুকি!

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১৬
গুগল ডাক্তারে স্বাস্থ্যের ঝুকি!

বিশ্বব্যাপী চিকিৎসায় নতুন এক ডাক্তারের উদয় হয়েছে। নামটি তার গুগল।

আর এতে ভীষণ নাখোশ পাশ করা নামি দামি ডাক্তাররা।

গুগল ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে যারা রোগ-বালাইয়ে ভরসা করছেন, তাদের জন্য এই চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে, এতে রোগীরা নিজেদের বেশিই ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।

রোগে পড়লে গুগল সার্চের মাধ্যমে রোগের বিভিন্ন লক্ষণ মিলিয়ে নিজেই নিজের জন্য ওষুধ-পথ্য নিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।   চিকিৎসকরা এই সিনট্রমের নাম দিয়েছেন ‘সাইবারকোনড্রিয়াক’। আর এর পরিণতি ভয়াবহ।

বলা হচ্ছে, এসব করে করে যখন অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে তখন হয় অস্ত্রোপচার, নয়তো বড় খরচের চিকিৎসায় যেতে হয় অনেককে।

যুক্তরাজ্যে এই গুগল ডাক্তারে নির্ভরতার একটা জরিপ করা হয়েছে। তাতে জানা গেছে, প্রতিমাসে দেশটির এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে নিজেদের শরীরের রোগবালাই সম্পর্কে জানে। এর হার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। মোটে দুই বছর আগে এই মানুষগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশের মধ্যে এহেন আচরণ দেখা যেতো এখন তা ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

হেল্পলাইন নামে একটি সংস্থার পক্ষ থেকেই জরিপটি করা হয়েছে। এরা ৬০ পাউন্ড চার্জ নিয়ে কোন চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের ব্যবসায় এখন ভাটা। হেল্পলাইনের প্রতিষ্ঠাতা ড. ক্যারেন মরটন জানালেন, যখন তারা এ নিয়ে ডাটা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তখন মাসে ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) লোকের মধ্যে এই আচরণ দেখেছেন, কিন্তু মোটে এক মাসের ব্যবধানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ মিলিয়নে। সেই হিসাবে, কেবল ‍যুক্তরাজ্যেই ইন্টারনেটে স্বাস্থ্য বিষয়ক মোট সার্চের সংখ্যা দেখা যাচ্ছে বছরে ২০ কোটি।

‘ইন্টারনেটে মেডিকেল সার্চকে আমরা ভালো মন্দ দুই দিক থেকেই দেখতে পারি। এতে রোগির সচেতনতার মাত্রা বাড়ে বটে কিন্তু সে অনুযায়ী নিজেই ওষুধ-পথ্য নিতে শুরু করলে তা উদ্বেগের কারণ বটে,’ বলেন ক্যারেন মরটন।

ব্যত্যয় ঘটে নানা কারণে। ধরুন আপনার চেস্ট ইনফেকশন হয়ে গেছে সেটা না খুঁজে নিউমোনিয়া খুঁজলেন। আবার গলায় ঝামেলা দেখলেই টনসিলিটিস খুঁজে দেখে ও বুঝে নিলেন আপনার কি হয়েছে! আর এসবের কারণে আজকাল অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বেশ বেড়েছে।

লন্ডনের একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার ড. মার্টিন সয়েইরস বলেন, গুগলের স্পিড বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইপোকনিড্রিয়াক সিনড্রমটি এখন একই গতিতে সাইবারকনড্রিয়াক সিনড্রমে রূপ নিয়েছে।

আগে ছোটবড় নানা সমস্যা নিয়ে লোকেরা বছরে চার কিংবা পাঁচবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতো। তবে সে মাত্রা কমলে কি হবে, মারাত্মক স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়ে যাওয়া রোগীর সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। যাদের অস্ত্রোপচার পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।

গুগলের ওপর ভর করে নিজেদের বারোটা বাজিয়ে তবেই এরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন।

এই চিকিৎসক বলেন, রোগী ইন্টারনেটে তার রোগ সম্পর্কে পড়াশুনা করুক, জানুক সেটা আমিও চাই কিন্তু আমি মনে করি তার জন্য তাদের দায়িত্বশীল, তথ্যবহুল ও সঠিক ওয়েব সাইটে যেতে হবে, স্বাস্থ্য দফতরও এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারে। কিন্তু গুগল করে যেনোতেনো সাইটে ঢুকে রোগ সম্পর্কে জেনে নিজে নিজেই ব্যবস্থা নিয়ে নেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।  

অপর এক জেনারেল প্র্যাকটিশনার ড. অ্যান্থনি সেরুলোও মনে করেন গুগল সার্চ থেকে রোগী তার নিজের অসুস্থতার ব্যপারে ভুল ব্যবস্থা নিতে পারে।

অনেক সাইটে অস্পষ্ট, পরষ্পরবিরোধী তথ্য থাকে যা রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, বলেন তিনি।

অতএব স্রেফ গুগল ডাক্তারে ভরসা আর নয়, আহ্বান এই চিকিৎসকদের।

বাংলাদেশ সময় ১১০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad