ঢাকা: শীতের ডায়রিয়া বাড়ছে। শীত মৌসুমে সক্রিয় হয় এমন ভাইরাসবাহী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
রাজধানীর শিশু হাসপাতাল থেকে বুধবার পাওয়া তথ্যমতে, এর আগের ২৪ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে অর্ধশতাধিক শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ)’তে ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারির তথ্যে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এখানে প্রতিদিন ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০জন। যাদের অধিকাংশই শিশু। এছাড়াও দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় সে অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুদের ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ প্রতিরোধের পরিচালক এবং কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল এর লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামশুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, রোটা ভাইরাস খাবারের সঙ্গে পেটে গেলে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। সময়মতো চিহ্নিত করতে না পারলে বা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তবে সবশেষ খবর পর্যন্ত এ বছর কোনও হাসপাতাল থেকেই ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
অধ্যাপক ডা. অাবুল খায়ের বলেন, অনেকেই শীতে শিশুর অসুস্থতা বলতে নিউমোনিয়াকে বোঝেন। তবে এখন ডায়রিয়ার প্রকোপও রয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকেও এ ধরনের খবর এসেছে। তবে এতে আতংকের কিছু নেই।
বৃহস্পতিবার আইসিডিআরবি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শীতের মৌসুমে এই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি।
গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দেড় বছরের সামিউল। শিশুটির মা জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পাতলা পায়খানা আর বমি হচ্ছিল সামিউলের। বেশ দুর্বল হয়ে পড়লে বুধবার ভোরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে স্যালাইন পেয়ে একটু চাঙা হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে রয়েছে ৪ বছরের শিশু তাহসীন। তার মা নিপা জানান, ২৫ জানুয়ারি থেকেই পানির মতো পাতলা পায়খানা হতে থাকে। অবস্থার আরো অবনতি হলে ২৬ জানুয়ারি দুপুর ৩ টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাহসীনকে। টানা তিনটি স্যালাইন দিতে হয় তাকে।
আইসিডিআরবি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সার্ভিসের ইনচার্জ এবং প্রধান চিকিৎসক ডা. প্রদীপ কে. বর্ধণ বাংলানিউজকে বলেন, এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা আসছে বেশি। আর তাদের ৫৫ শতাংশই রোটা ভাইরাসের সংক্রমনে অসুস্থ। ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে ২ বছরের কম বয়সীরা আরো বেশি ঝুকিঁতে।
তিনি বলেন, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়ার কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া। আর আমাদের দেশে শীতকালে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এটা মুখের মধ্য দিয়েই শিশুদের পাকস্থলীতে যায়। বড়দের ক্ষেত্রে রোটা খুব একটা দূর্বল করতে পারে না। তবে শিশুরা যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে মারাও যেতে পারে।
শিশু কি খাচ্ছে, মুখে আঙ্গুল দিচ্ছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে আর বাইরে থেকে কেনা খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন ডা. প্রদীপ।
রোটা ভাইরাস প্রতিরোধে মায়ের দুধ কার্যকর বলে জানান তিনি। বলেন, যেসব শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খায়, তাদের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
ডায়রিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। এর ফলে শিশু আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়ে আর ঝুঁকি বেড়ে যায়, জানান ডা. প্রদীপ।
ঢাকায় উত্তরা অাধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, অনেক সময় শিশুরা শীতকালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে অভিভাবকরা বুঝতে পারেন না। অথচ এটা বর্ষার ডায়রিয়ার চেয়েও বিপদজনক এবং শরীরকে দূর্বল করে দেয়।
তিনি বলেন, শিশুর প্রথমবার পাতলা পায়খানা হলেই তাকে স্যালাইন খেতে দিতে হবে। এবং চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
এই ভাইরাস একজনের শরীর থেকে আরেকজনের মধ্যেও ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়াই উচিত হবে, বলেন ডা. আবুল কাশেম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, খাবারের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে ঢোকে। শীতকালে এর প্রকোপ দেখা যায়।
শীতের সময়ে পানির ব্যবহারে কিছুটা অনীহা থাকে। শিশুরাও হাত ধুতে চায় না। এ জন্য তাদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, বলেন ডা. দ্বীন মোহম্মদ।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেক সময় মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে। এটাও বিপদজনক।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের রোটা ভাইরাসের বিস্তৃতি ছাড়াও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং শীতে অন্যান্য সংক্রামক রোগ সর্ম্পকে মানুষকে সচেতন করার ওপর জোর দেন এই চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, এ লক্ষে অধিদপ্তর থেকে সিভিল সার্জনদের যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
এমএন/