ঢাকা: দেখলে মনে হবে হাতের ভেতর দিয়ে গাছের ডালপালা সদৃশ কিছু বেরিয়েছে। টুকরো পাথরখণ্ড মনে হতে পারে কারও।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে এসেছেন খুলনার আবুল হোসেন (২৬)।
আবুল হোসেনের এ রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
খুলনার পাইকগাছার সরলবাতিখালি গ্রামের মানিক বাজনাদারের ছেলে তিনি। আট ভাই-বোনের মধ্যে ছোট। ঘরে রয়েছে তাহেরা নামে এক কন্যা সন্তান।
বিরল এক রোগে আক্রান্ত আবুল হোসেনকে শনিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান তার মা আমেনা ও বড় বোন আদুরি।
আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দশ বছর আগে আমার শরীরে আঁচিল ওঠে। পরবর্তীতে আঁচিলগুলো হাতে উঠতে থাকে। এ সময় আমি হোমিওপ্যাথি খাইতাম। তখন ভ্যানগাড়ি চালাইতাম। পরে আঁচিলগুলো বাড়তে থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। সেসময় চিকিৎসক কিছু ওষুধ দেন যা আমি নিয়মিত খেতে থাকি।
এক সময় আমার হাতের আঙুল দিয়ে গাছের শেকড়ের মতো বের হতে থাকে। তখন থেকে নিজের কাজ করতে পারি না। এমন কি টয়লেটে গেলেও স্ত্রী বা মায়ের সাহায্য নিতে হয় আমাকে। যোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, প্রায় পাঁচবছর আগে চিকিৎসা নিতে তিনি কলকাতা যান। এখন পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়বার কলকাতা গিয়েছেন।
ভিক্ষা করে কলকাতা যাওয়ার খরচ জোগাড় করেছেন বলেও জানান তিনি।
আবুল হোসেন বলেন, আমি কলকাতায় একটি হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে জানান ওষুধে কাজ হবে না, সার্জারি প্রয়োজন।
খুলনার চিকিৎসদের উদ্যোগে তার মা ও বোন তাকে ঢামেকে ভর্তি করিয়েছেন।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে এই রোগ প্রথম দেখলাম আমরা। এ রোগে আক্রান্ত আর কোনো রোগী আছে কিনা আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে আমরা জানতে পেরেছি এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের ট্রি-ম্যান বলা হয়। এই রোগ হিউম্যান প্যাপেরাস ভাইরাসজনিত কারণে হতে পারে। আবার অন্য কারণেও হতে পারে।
পৃথিবীতে বাংলাদেশসহ এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকজনকে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। তাদের ইন্দোনেশিয়ায়, রোমানিয়া এবং সর্বশেষ এই বাংলাদেশে দেখা গেলো। যোগ করেন তিনি।
মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে আবুল হোসেনের চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এজেডএস/আরএইচএস/এএ