ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জিকা’র আশঙ্কা নেই

আক্রান্ত বহিরাগত এলেও সরকারি ব্যয়ে চিকিৎসা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
আক্রান্ত বহিরাগত এলেও সরকারি ব্যয়ে চিকিৎসা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম

ঢাকা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের আশঙ্কা নেই, তবু উপযোগী ব্যবস্থা নিয়ে সতর্ক রয়েছে সরকার।

জিকা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগতদের রোগ শনাক্তে আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বারগুলোতে মেডিকেল টিম কাজ করছে।

কারও শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হলে তার সম্পূর্ণ চিকিৎসা সরকার দেবে।
 
মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জিকা ভাইরাস: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ বিষয়ে এর আয়োজন হয়।
 
সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, বিমানবন্দর বা বাইরে থেকে আসা যে কোনো পোর্টেই যদি আমরা দেখি, জিকা আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ এসেছে, তাকে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি সন্দেহ হয়, তাহলে সার্বক্ষণিক অনুসরণ করে তার উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া হবে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে। এ সময়টিতে রোগ সংক্রমণ যেন কোনভাবেই না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব মিলিয়ে সম্পূর্ণ নিরাময় হবেন তিনি। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
 
অধিদফতরের ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড লাইন ডিরেক্টর, কম্যুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান কিছু তথ্য-উপাত্তে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।
 
প্রেজেন্টেশনে তিনি দেখান যে, বাংলাদেশে এ রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা নেই। যদি কোনো ভাবে কাউকে এটি আক্রান্ত করেও থাকে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং মৃত্যুঝুঁকিও কম।  
 
সম্মেলনে মন্ত্রীর পাঠের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে যে বক্তব্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে জিকা প্রসঙ্গে সরকারের নেওয়া ব্যবস্থাগুলোর উল্লেখ রয়েছে।
 
এতে বলা হয়েছে, ৪ ফেব্রুয়ারি আইএইচআর বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির বর্ধিত সভা হয়। এতে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কিছু কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। যেমন- জিকা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রিপেয়ারডনেস প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।
 
জিকা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত সন্দেহজনক জিকা রোগী শনাক্তকরণে সকল আন্তজার্তিক প্রবেশদ্বারে (পোর্ট অব এন্ট্রি) ইতোমধ্যে কর্মরত মেডিকেল টিমের কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়েছে।
 
শাহ্জালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীর জিকা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত স্ক্রিনিং কার্যক্রম মনিটর করার জন্য ওয়েব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
 
মশা ও মানুষের রক্ত নমুনায় জিকা ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য পিসিআর রিজেন্ট সংগ্রহের ব্যাপারে আন্তজার্তিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ সাপেক্ষে অনলাইনে চাহিদা জানানো হয়েছে।
 
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এবং সম্ভাব্য জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এডিস মশা নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে সমন্বিতভাবে প্রতিরোধ কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছে।
 
এছাড়া বলা হয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান দীপপুঞ্জের ৩০টি দেশসহ ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে নব-উদ্ভূত জিকা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে এ ভাইরাসের সংক্রমণকে পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগজনক জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
 
সে প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর আক্রান্ত দেশগুলো থেকে জিকা ভাইরাসের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
 
এগুলো হলো- ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে কীটতত্ত্ববিদরা এডিস মশায় জিকা ভাইরাস আছে কিনা তা দেখার জন্য এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন।
 
৩ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের সকল সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা ই-মেইল বার্তা দিয়ে জিকা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত জানিয়েছেন।
 
১৯৪৭ সালে প্রথম জিকা ভাইরাস আবিস্কৃত হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশে অদ্যবধি এ ভাইরাস মানুষ, এডিস মশা, বানর বা অন্য কোনো প্রাণির দেহে শনাক্ত হয়নি। বাংলাদেশে দ্রুত গতিতে জিকা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আতংকিত না হতে জনসাধারণকে টেলিভিশন বা অন্য মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে অনুরোধ জানানো হয়।
 
সবশেষে মন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে গণসচেতনতা বাড়ানো খুবই দরকার। আমাদের দেশের গণমাধ্যম এসব পরিস্থিতিতে সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অতীতে ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেও তারা জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছে। এবারও জিকা ভাইরাসের ক্ষেত্রে তারা  শুরু থেকেই সোচ্চার।
 
তিনি বলেন, আমি সকল গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রচার মাধ্যমগুলোতে জিকা ভাইরাস সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার করবেন। সঠিক পরিস্থিতি ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অনুসরণ না করলে অনেক সময় এ জাতীয় সংবাদ ভীতির সঞ্চার করতে পারে। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ, জিকা ভাইরাসসহ এ জাতীয় অপরিচিত রোগ নিয়ে সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে আপনারা আরেকটু দায়িত্বশীল থাকুন যাতে জনমনে আতংক না ছড়ায়।
 
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ইতোমধ্যে আমি জাতীয় সংসদে জিকা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছি। জনগণের প্রতি আহ্বান, আপনারা আশ্বস্ত থাকুন এই ভাইরাস আমাদের দেশে কোনোভাবেই সংক্রমিত হতে পারবে না। সরকার জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬/আপডেট ১৪১৫ ঘণ্টা
এসকেএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।