ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘অটিজম অ্যাডাল্ট হোম’ চান অভিভাবকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
‘অটিজম অ্যাডাল্ট হোম’ চান অভিভাবকরা ছবি: জি এম মুজিবুর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এএফএমআই অডিটোরিয়াম (ঢাকা সেনানিবাস) থেকে: রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে একটি ‘অটিজম হোম’ বা ‘অ্যাডাল্ট হোম’ চান অটিস্টিক সন্তানদের অভিভাবকরা। এক্ষেত্রে সবটুকু ব্যয় বইতেও প্রস্তুত তারা।

প্রয়োজনে নিজেদের সম্পত্তি অটিজম হোমকে উইল করে দিতে চান এসব অভিভাবক।

বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) সকালে ঢাকা সেনানিবাসে এএফএমআই অডিটোরিয়ামে সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তর ‘অটিজম সচেতনতা’ বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট।

এতে আগত অভিভাবকরা এমন উদ্যোগ চেয়ে আহবান বা দাবি নয়, সরকারের প্রতি কান্নাভরা কন্ঠে রীতিমতো মিনতি জানালেন। নিজেদের অভিজ্ঞতা ও কষ্টের কথা তুলে ধরে তারা জানান, রাষ্ট্রকে পাশে চান এ জীবনযুদ্ধে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন- সশস্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান। এতে পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান ছিলেন পরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. রবিউল হোসেন।

মাহফুজুর রহমান অটিজম আক্রান্তসহ অন্যান্য মানসিক সমস্যাগ্রস্থদের নিয়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সশস্র বাহিনীর কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান জেনারেল মো. আব্দুল মিয়া, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি প্রোটেকশন ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারপারসন অধ্যাপক মো. গোলাম রাব্বানী। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে গোলাম রাব্বানী বলেন, অটিজম আক্রান্তদের নিয়ে সরকারের উদ্যোগ সেরকমই হবে। মা-বাবার অবর্তমানে তাদের দেখভাল ও তদারকি যেন রাষ্ট্র করে, সে চেষ্টাই চলছে। তাদেরকে ‘প্রিভিলেজ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাবেন তারা।

সরকার ও ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অভিভাবকদের আশ্বস্ত করে বলেন, যা যা আপনাদের সন্তানের জন্য ভালো, আমরা তাই করবো।

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, শাহীন আক্তার, এমএসআই মল্লিক এতে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

মাহফুজুর রহমান বলেন, সমাজে প্রচলিত বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনার ধারাবাহিকতায় অটিজমের জন্য শিশুর মা-বাবাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু গবেষণা এজন্য কোনো অবস্থাতেই মা-বাবার দায় প্রমাণ হয় না। তাই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে অটিজম সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। সরকার যে ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ হবে।

অটিজম সচেতনতায় এ আয়োজনে তথ্য ও উপাত্ত তুলে ধরেন সিনিয়র মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কর্নেল এম কামরুল হাসান, শিশু নিউরোলজিস্ট কর্নেল আঞ্জুমান আরা বিউটি, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লে. কর্নেল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও লে. কর্নেল সোহেল হাসান চৌধুরী।

রবিউল হোসেন বলেন, অটিস্টিক সন্তানের পিতা-মাতা শুধু নয়, তাদের অভিভাবক পুরো রাষ্ট্র। তাদের তদারকিতে সরকার ও সেনাবাহিনী, পরিবার, সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে সমস্যা আর প্রকট থাকবে না।

বক্তারা অটিজমের লক্ষণ, রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সার্বিক ধারনা দেন এবং অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মা-বাবা ও তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও করণীয় সম্পর্কে বলেন। সমাজে প্রচলিত নানা ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করে সকলকে সাহায্যের হাত বাড়াতে আহবান জানান তারা।

প্রাণ গোপাল বলেন, আমরা বিগত কয়েকটি বছরে এতটাই এ বিষয়ে এগিয়েছি, সেটি বিশ্বের কাছে বিস্ময়। এখন অটিজমের চিকিৎসায় আমরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছি। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সঠিক পরিচর্যায় আমরা এ শিশুদের মধ্যেও পিথাগোরাস বা আইনস্টাইন পেতে পারি।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শাহিন আক্তার বলেন, আপনারা নিরাশ হবেন না। এসব শিশু দেবতূল্য। স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে তাদের মিশতে দিন।

অনুষ্ঠানে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সাহায্যের জন্য সমন্বিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব দেন। এতে ‘প্রয়াস’ ঢাকার অধ্যক্ষ কর্নেল মো. শহীদুল আলম, একজন অটিস্টিক শিশুর পিতা লে. কর্নেল মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং অটিজম থেকে মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়া শিশু এশা বক্তব্য রাখেন।

অটিজম সচেতনতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ভূমিকার প্রশংসা করেন বক্তারা। বিশ্বব্যাপী অটিস্টিক ও অন্যান্য মানসিক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা, জীবনমান উন্নয়ন ও পরিকল্পনা গ্রহন সম্পর্কিত বিশেষ উদ্যোগে পুতুলের প্রশংসা করেন তারা।

দু’জন অটিস্টিক শিশুর পিতা লে. কর্নেল মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম কান্না ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলেন, আমরা যখন থাকবো না, তখন বাচ্চাদের কী হবে? রাষ্ট্র যদি একটি ব্যবস্থা নেয়, আমরা আমাদের সম্পদগুলো সেখানে উইল করে রেখে যাবো। এমন উদ্যোগ প্রয়োজন। মা-বাবাই জানে, অটিস্টিক সন্তান নিয়ে কষ্টটা কতো। তবু সবাইকে বলবো, এমন সন্তান থাকলে হাল ছাড়বেন না। তাদের ভালোবাসুন। তারা খুব ভালোবাসা পছন্দ করে।

সবার দোয়া চেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এশা বলেন, আমার যখন খুব মন খারাপ হয়, তখন কান্না থামতেই চায় না। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি নাচ করি।

সশস্র বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালগুলোতে মনোরোগ বিভাগ ও সিএমএইচ ঢাকার শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিশু নিউরোলজিস্ট এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টের ‘প্রয়াস’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে।

‘প্রয়াস’ ঢাকার অধ্যক্ষ কর্নেল মো. শহীদুল আলম ঢাকাসহ প্রয়াসের বিভিন্ন শাখার কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

তিনি জানান, যে কোনো শিক্ষার্থী এলে তাদের স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক অবস্থা ও বয়স নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। শৈশবের শিক্ষা থেকে শুরু করে এর মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়।

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবক, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অটিজম নিয়ে কাজ করছেন এমন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু নিউরোলজিস্ট, শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞ এবং সাইকোলজিস্ট ছাড়াও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এসকেএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।