ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দেশে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ৫০ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় ওষুধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
দেশে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ৫০ শতাংশ অপ্রয়োজনীয় ওষুধ

ঢাকা: ওষুধ কোম্পানির প্ররোচনায় বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় ওষুধ চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে লেখেন। দেশের চিকিৎসায় ৫০ শতাংশ ওষুধ প্রয়োগ করা হয় অপ্রয়োজনে।

যা রোগীকে বিভিন্নভাবে অসুস্থ করে তুলছে।

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ও আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আলোচক চিকিৎসক ডাক্তার এইচ এম লেলিন চৌধুরী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে এ মন্তব্য করেন।

ডিএইচইএন এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার এর সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানুল হক বুলবুল।

আলোচনা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আমির হোসেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ, বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, ডিএইচএন এর সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী।
 
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশের মোট আক্রান্ত রোগীর ৬০ শতাংশ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। ডাক্তাররা যে ওষুধ লেখেন তার ৫০ শতাংশই অপ্রয়োজনীয়। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে এ অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে রোগীদের বাধ্য করছেন।

তাছাড়া দেশের রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে কোনো ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ দরকার।
 
অধ্যাপক ডা. মো. আবু সাঈদ বলেন, অসংক্রামক রোগ এখন সভ্যতার অভিশাপ। সভ্যতার নামে পরিবেশ দূষিত, খাবার দূষিত করাসহ উন্নয়নের ভুল পথ মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাজ জনস্বাস্থ্য রক্ষা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও জনস্বাস্থ্যের হানিকর কোম্পানির স্বার্থে রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তামাক কোম্পানিগুলো দেশে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ছে।

অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানুল হক বুলবুল বলেন, বাংলাদেশে ৫৯ শতাংশ মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে মারা যায়। এক্ষেত্রে হেলথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

গাউস পিয়ারী বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শিশুদের খেলাধুলা ও শাক-সব্জি খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। পাশাপাশি শিশুরা যেন খেলাধুলার সুযোগ পায়, সেরকম পরিবেশও গড়ে তোলা প্রয়োজন।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অসংক্রামক রোগ প্রসারে পরিবেশ দূষণ, জীবন আচরণ ও খাদ্যাভাস দায়ী। মাত্রাতিরিক্ত ভাত খাওয়ার অভ্যাস ডায়াবেটিস রোগের প্রভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে।  

অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সরকার অসংক্রামক রোগের বিস্তারে চিন্তিত। তাই অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু যথাযথ সিদ্ধান্তের অভাবে সরকারের অসংক্রামক রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব হচ্ছে না। উচিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বেশি জোর দেওয়া।

মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।