ঢাকা: অ্যানেসথিওলজিস্টের অভাবে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রায় বন্ধ হয়ে রয়েছে অস্ত্রোপচার। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে রয়েছে অ্যানেসথিওলজিস্টের সংকট।
অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, যন্ত্রপাতি, সার্জন থাকা সত্ত্বেও দেওয়া যাচ্ছে না অস্ত্রোপচার সেবা।
অপারেশনের আগে রোগীর শারীরিক সুস্থতা যাচাই করা, অপারেশন চলাকালে রোগীকে ব্যথামুক্ত রাখা ও সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং অপারেশনের পরও রোগীকে ব্যথামুক্ত রাখার কাজটি করে থাকেন অ্যানেসথিওলজিস্ট। মুমূর্ষু রোগীর ইনটেনসিভ কেয়ার, জটিল ব্যথার চিকিৎসা, বিভিন্ন রোগীদের পেলিয়েটিভ কেয়ার সেবা প্রদানসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারা।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথিওলজিস্টের গবেষণায় জানা গেছে, অস্ত্রোপচারের রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই প্রশ্ন করে থাকেন, অপারেশনের সময় ব্যথা পাবেন কি-না? ৮০ শতাংশ রোগী প্রশ্ন করেন, অস্ত্রোপচারের পর তার জ্ঞান কতোক্ষণ পর ফিরবে? এসব উত্তর দিতে পারেন একজন অ্যানেসথিওলজিস্ট।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে একজন অস্ত্রোপচারের রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগের জন্যে দক্ষ অ্যানেসথিওলজিস্ট, আধুনিক যন্ত্রপাতি, পরিমাণমতো ও মানসম্মত ওষুধের প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে রয়েছে অ্যানেসথিওলজিস্টের সংকট।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র মতে, দেশের খুব কম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালেই অ্যানেসথিওলজিস্ট রয়েছেন। অনেক হাসপাতালে সার্জনরা বেকার হয়ে আছেন শুধুমাত্র অ্যানেসথিওলজিস্টের অভাবে। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে জনবল রয়েছে প্রায় দুই লাখ। অথচ অ্যানেসথিওলজিস্টের পদের সংখ্যা মাত্র এক হাজার একশ’। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ মাত্র ১৭টি। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক পদে অধ্যাপক পদের দ্বিগুণ ও সহকারী অধ্যাপক পদে অধ্যাপকের তিনগুণ পদ রয়েছে। অবশিষ্ট পদে রয়েছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া এমবিবিএস চিকিৎসকরা। সারাদেশে অ্যানেসথিওলজিস্টের শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশ’।
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোনো অ্যানেসথিওলজিস্ট নেই। ফলে বন্ধ হয়ে রয়েছে অস্ত্রোপচার। ফলে সিজার করতে হলেও রোগীকে ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র মতে, বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলা এবং নোয়াখালীর হাতিয়া, কোম্পানিগঞ্জ, চাটখিল, কবিরহাট ও সূবর্ণচর প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালেই অ্যানেসথিয়ার জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদটি শূন্য রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট এবং রাজশাহীর সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল, নেত্রকোনা জেলার একমাত্র মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রসহ অসংখ্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেও এ পদটি শূন্য রয়েছে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথিওলজিস্টের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ডা. কাওছার সর্দার শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি হাসপাতালে অ্যানেসথিওলজিস্ট থাকা আবশ্যক। তবে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অ্যানেসথিওলজিস্টের সংখ্যা মাত্র এক হাজার। আর গ্রাজুয়েশন করা রয়েছেন প্রায় ৬০০ জন। ফলে যেমন সরকারি হাসপাতালগুলোতে অ্যানেসথিওলজিস্টের সংকট রয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও তেমনি এ সংকট প্রবল।
পদোন্নতি না থাকার কারণেই দেশে অ্যানেসথিওলজিস্টের সংকট রয়েছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা বলেন, পদোন্নতির সুযোগ খুবই কম অ্যানেসথেসিয়ায়। ফলে এমবিবিএস ডাক্তাররা কেউ এ বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না। একজন অ্যানেসথিওলজিস্ট জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। তবে ওপরের দিকে পদ না থাকায় পদোন্নতি হয় না তাদের। সহযোগী বা সহকারী অধ্যাপক হিসেবেই অনেককে চাকরি থেকে অবসর নিতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এমএন/এএসআর