ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মুগদা হাসপাতালে অসহায় মনিরুলরা!

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
মুগদা হাসপাতালে অসহায় মনিরুলরা!

‘এইহানে রোগীগো বড়ই কষ্ট। অ্যাম্বুলেন্স আছে, তারপরও সেদিন অনেক রাতে ১১শ’ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হইছে। ওষুধের লাইগা দিন-রাত দৌড়াদৌড়ি তো আছেই’।

ঢাকা: ‘এইহানে রোগীগো বড়ই কষ্ট। অ্যাম্বুলেন্স আছে, তারপরও সেদিন অনেক রাতে ১১শ’ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হইছে।

ওষুধের লাইগা দিন-রাত দৌড়াদৌড়ি তো আছেই’।
 
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে মুগদা ৫০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন হাসপাতালে ভর্তি নবজাতকের বাবা মনিরুল। চোখে তার রাত জাগার ক্লান্তি। চুলগুলো উসকো-খুসকো। হাতে নার্সের ধরিয়ে দেওয়া স্লিপ।  
 
গত শনিবার (১২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টা। মনিরুলের নবজাতক শিশু সন্তানকে দেখে ডাক্তার তাকে বলেছিলেন দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। নবজাতক শিশুটির সঙ্গে মা। এমন রোগীর জন্য প্রয়োজন অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে এসে মনিরুল দেখলেন, ভেতরে পার্ক করা রয়েছে সেটি। কিন্তু ড্রাইভার নেই। ওয়ার্ডে এসে দায়িত্বরত ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে অ্যাম্বুলেন্স চাইলেন।  

কিন্তু ওয়ার্ড মাস্টার কড়া গলায় জানিয়ে দিলেন, ‘ড্রাইভার ঘুমাচ্ছেন। এখন অ্যাম্বুলেন্স বের হবে না। আপনি অন্য ব্যবস্থা করেন’।  

পকেটে টাকার পরিমাণ ছিল সীমিত। বাধ্য হয়ে বাড়ি গিয়ে টাকা নিয়ে তারপর হাসপাতালে আসেন তিনি। এরপর ১১শ’ টাকায় পাওয়া যায় অ্যাম্বুলেন্স।  

মনিরুলের অসহায়ত্বের গল্প ছিল এটাই।
 
এমনই এক একটি নিদারুণ অসহায়ত্বের গল্প তৈরি হয় মুগদা হাসপাতালে। দীর্ঘশ্বাসের লাইন যেন আরো দীর্ঘ হতে থাকে তার মতো হাজারো মনিরুলের। তাই তো আক্ষেপ করে বলেন তিনি- ‘বিপদ থাইকা বাঁচার লাইগা এইহানে আইছি। আইসা আরো বিপদে পড়ছি। তাইলে কি হাসপাতালে আইসা ভুলই করছি?’ 

প্রশ্নটি ছুড়েই হাতের স্লিপটি নিয়ে দৌড় দিলেন মনিরুল। জানিয়ে গেলেন, ‘আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৭ বার আটতলায় উঠছি আর নামছি। হয়রানির আর শেষ নাই। এইহান থাইকা যাইতে পারলেই বাঁচি’।
 
শিশু ওয়ার্ডের ভেতরের অবস্থা আরো করুণ।  
 
৮০৬ নং ওয়ার্ডে শুয়ে আছে শিশু সাবিনা। পাশে বসে মা শারমিন। অসুস্থ মেয়েকে দেখিয়ে বলেন, ‘আজ সকালে ডাক্তার দুইটা ইনজেকশন দিয়ে গেছেন। একটার দাম দেড়শ’ টাকা, আরেকটার দাম ২শ’ টাকা। নার্স আপারে কইলাম, আমার কাছে তো এতো টাকা নাই। নার্স আপা উত্তর দিলেন, আমাদের কাছে ইনজেকশন নাই। যেমনে পারেন ব্যবস্থা করেন। ওষুধ কিনতে না পারলে হাসপাতালে এসেছেন কেন?’
 
পরে তাকে ৫০ টাকা দেওয়ার শর্তে দু’টি ইনজেকশনের একটি দিতে রাজি হন নার্স- এমনটি জানালেন শারমিন।  
 
পাশের ওয়ার্ডের নুরুল আমিন বলেন, ‘তাদের কাছে অনেক স্যালাইন থাকলেও আমাদের স্যালাইন কিনে আনতে হয়’।

সকালে হাসপাতালের দেওয়া পাউরুটি দেখিয়ে নুরুল আমিনের স্ত্রী নাজমা বলেন, ‘সকালে যে পাউরুটি দিয়েছে, তা খাওয়া তো দূরের কথা, হাতে নিতেও কষ্ট হয়েছে আমাদের। বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ রোগীই খাবার হাসপাতালের বিনে ফেলে দিয়েছেন’।
 
‘একটু কম টাকায় সেবার জন্য হাসপাতালে আসি আর নার্সরা আমাদের সঙ্গে গরু ছাগলের মতো ব্যবহার করেন’- অন্য একটি বেড থেকে উঠে এসে কথাগুলো বলছিলেন আরেক শিশুর মা।
 
তাদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দায়িত্বরত নার্স জানান, ইনচার্জ ছুটিতে আছেন।  
 
শিশু ওয়ার্ডের এসব সমস্যার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক আজিজুন নাহার বলেন, ‘প্রতিদিন খাবার আমি নিজে চেক করে তারপর ওয়ার্ডে পাঠাই। তাহলে পচা-বাসি খাবার কিভাবে বিনে পড়ে থাকে?’
 
নার্সদের ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে তো নার্সরা আমার সঙ্গেই কথা বলতে চান না। রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার চরম হীনমন্যতার পরিচয় ছাড়া আর কিছুই না। বিষয়টি আমি নজরদারি করছি’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
জেডএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।