ঢাকা: চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা বলে থাকেন, এই স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দশা শয্যাশায়ী রোগীর মতো। কিন্তু এই রুগ্ন ইনস্টিটিউটই আবার পদে পদে এমন টাকা দাবি করে যে, সদ্যজাত সন্তান কোলে নিতেও তাদের দেওয়া লাগে ৫০০ টাকা!
এমন দশা রাজধানীর মাতুয়াইলের শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের।
সোমবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইনস্টিটিউটটির ভেতরে-বাইরে ঘোরাঘুরি করে দেখা যায় ভোগান্তির নানা চিত্র, শোনা যায় নানা অভিযোগ। রোগী ও ইনস্টিটিউটের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন শত শত রোগী সরকারি এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেও চিকিৎসক ও নার্স সংকট দেখে ফিরে যাচ্ছেন। দুপুর ২টার পর বন্ধ হয়ে যায় জরুরি বিভাগ। এর পাশাপাশি ‘কমিশন’ ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের কতিপয় কর্মচারীর সহযোগিতায় দালাল চক্রের বেসরকারি হাসপাতালে রোগী বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনাতো রয়েছেই।
দায়িত্বরত নার্স সেলিনা পারভীন বলেন, এখানে নেই কোনো ব্লাড ব্যাংকও। যে কারণে প্রায়ই রোগীদের নিয়ে বিপদে পড়তে হয়।
সেবার ক্ষেত্রে এমন রুগ্নদশা হলেও পদে পদে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই এই স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। এমনকি সদ্যজাত সন্তান কোলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও টাকা দিতে হয় কর্তৃপক্ষের লোকদের। যেমন জরুরি বিভাগের ২০১ নম্বর ওয়ার্ডে সন্তান জন্ম দেওয়া এক রোগীর আত্মীয় তাহেরা বাংলানিউজকে বলছিলেন, “সেবার চেয়ে টাকা বেশি নেয় এই হাসপাতাল। জন্ম নেওয়া বাচ্চা প্রথম কোলে তুলে দিতে চাওয়া হয় ৫০০ টাকা। যদি টাকা না দেওয়া হয় তবে মা বা আত্মীয় কাউকেই বাচ্চার কাছে যেতে দেওয়া হয় না। ”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “এই ৫০০ টাকা তাদের (নার্স) নিতে বলা হয়, কিন্তু টাকার কোনো ভাগই পান না নার্সরা। ”
তাহলে এই টাকা কোথায় যায়? জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, “স্থানীয় প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক চক্রের সঙ্গে অনেকটা চুক্তিবদ্ধ কতিপয় কর্মচারী এই টাকা ভাগাভাগি করে নেন। ”
ইনস্টিটিউটের নিচতলায় অপেক্ষারত হালিমা নামে এক রোগী বলেন, “জ্বর-ঠাণ্ডার জন্য এসেছি, দু’বার পরীক্ষা করিয়েছে। তাছাড়া আরও কয়েকটি পরীক্ষা করার জন্য ১৩শ’ টাকা নিয়েছে, দুই ঘণ্টা হয়ে গেল বসে আছি। কেউ নেই, আগের পরীক্ষার রিপোর্ট দেবে দেবে কিনা বুঝতে পারছি না। আরেকটু পর তো ডাক্তারই পাওয়া যাবে না। তখন এখানকার কেউই হয়তো বলবেন পাশের ক্লিনিকে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসেন। আমরা গরিব মানুষ কষ্ট করে আসি, আর আমাদের টাকা এভাবে ওরা মেরে নেয়। ”জ্বরের জন্য দু’বার পরীক্ষা করার বিষয়টি জানার জন্য জানতে চাইলে নার্স সেলিনা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, “হয়তো প্রথমবার পরীক্ষা ভালো হয়নি। দ্বিতীয়বার আবার করা হয়েছে। ফলে দু’বারই টাকা নেওয়া হয়েছে। আমরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি। কিছু বলতে গেলে আমাদের চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। ”
এ বিষয়ে আলাপ করলে ইনস্টিটিউটের ক্যাশ অফিসার মাসুম খান বাংলানিউজকে বলেন, “নানারকম অনিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে এই হাসপাতাল। এখানে বড় কর্মকর্তার চেয়ে আনসারের দাপট বেশি, অন্যদিকে যন্ত্রপাতির সঙ্কট তো আছেই। পুরো হাসপাতালের জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্স, সেটাও সচল নয়। নেই কোনো ভাল আইসিইউ ব্যবস্থা। যা দেখছেন সব বাইরে থেকে, ভেতরে কিছু নেই। ”
হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেগম হোসনে আরার সঙ্গে এসব বিষয়ে আলাপ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “আমি সবে দুই মাস এসেছি। বিষয়গুলো জানি। সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই, তবে এখানকার পরিবেশ আমার অনুকূলে নেই। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৬
এসটি/এইচএ/