গত শিক্ষাবর্ষের মতো এ শিক্ষাবর্ষেও সরকারি মেডিকেল কলেজে নন-সার্কভুক্ত দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, এটাকে তার নমুনামাত্র বলে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নন-সার্কভূক্ত দেশসমূহের জন্যে এমবিবিএস কোর্সে সুপারিশকৃত আসন সংখ্যা ৬৪টি।
জানা যায়, এই ২৮ জন শিক্ষার্থীকে মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করার কথা। কিন্তু মেধাক্রমে প্রথমে থাকার পরও অনেক শিক্ষার্থীকে প্রথম সারির মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মেডিকেল কর্মকর্তা এবং সরকারের ওপর মহলের যোগসাজশে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নন-সার্কভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের ভর্তির তালিকা প্রস্তুত করা হয়, যেখানে বঞ্চিত করা হয় মেধাবীদের।
বাংলানিউজের হাতে আসা কিছু নথিপত্রে দেখা যায়, মেধাক্রমে সর্বোচ্চ ১০ নাম্বারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩ জন। এর মধ্যে প্রথম দু’জন মালয়েশিয়ান এবং তৃতীয় জন আমেরিকান।
মেধা তালিকায় সবার ওপরে থাকলেও সোহার্দ্রা রাজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিবর্তে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রাজধানীর বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। আর তার পরের দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেয়েন্তেন বি এবং তৃতীয় স্থানের ফারজানা আফরিন ঠিক পেয়ে গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ।
মেধাক্রমে ৯ দশমিক ৬০ নাম্বার পেয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা আমেরিকার উরিশমিন জাহুর খান সুযোগ পেয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির। একই নাম্বার পেয়ে পঞ্চম অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়ার সারভিন রাওকে ভর্তির জন্যে সুপারিশ করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে। যা থাকে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার অনেক পেছনে।
আবার ৯ দশমিক ৩৪ নাম্বার পেয়ে আমেরিকার তানভীন দোলা পেয়েছেন দ্বিতীয় প্রধান প্রতিষ্ঠান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। অথচ মেধাক্রমে তার অবস্থান ষষ্ঠ। একই নাম্বার পেয়ে আমেরিকার আদিবা গাফ্ফারের স্থান হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে। তার মেধাক্রম সপ্তম।
চতুর্থ মেধাক্রম থেকে সপ্তম মেধাক্রম পর্যন্ত কাউকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেওয়া না হলেও অষ্টম এবং নবম অবস্থানে থাকা শিক্ষার্থীরা ঠিকই আবার পেয়ে গেছেন এই সুযোগ।
৯ দশমিক ৩৩ নম্বর পেয়ে অষ্টম অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী জেসিনা বাত্রিসিয়া বিনতি জামিরি এবং একই নাম্বার পেয়ে নবম অবস্থানে থাকা আমেরিকার খন্দকার তামকিন সাকির পেয়ে গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নের।
প্রথম ১৬ জনের তালিকা থেকে দেখা যায়, কানাডার ফাতেমা হাসান ১৫তম অবস্থানে থেকেও সুযোগ পেয়েছেন ঢাকার শহীদ সোরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নের। যেখানে ১০ম থেকে ১৪তম অবস্থানে থাকা সব বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে ঢাকার বাইরের ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ ধরনের দুর্নীতি করা হয়। যেখানে মেধাবী বিদেশি শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রধান শরীফা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সর্ম্পকে আমার জানা নেই।
তিনি এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
আর অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা) ডা. আব্দুর রশিদকে বেশ কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
এমএন/এইচএ/