ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

১০ বার ডাকলেও রোগীর কাছে আসেন না নার্স

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
১০ বার ডাকলেও রোগীর কাছে আসেন না নার্স ১০ বার ডাকলেও রোগীর কাছে আসেন না নার্স

সিরাজগঞ্জ: দেড় ঘণ্টা ধইরা স্যালাইনের লাইনে ব্যথা কইরতাছে। সিস্টার আফাকে ডাইকা আনার জন্যি আমার মাকে অন্তত ১০ বার পাঠাইছি। কিন্তু এহনো নার্স আফা আসে নাই। আর ডাক্তার তো দুইদিন ধইরাই আইসে না।

রোববার (২৮ মে) দুপুরের দিকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসাপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগী আব্দুল মজিদ কোঁকাতে কোঁকাতে এসব কথা বলছিলেন।

একই ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন কামারখন্দের আব্দুস সালাম।

তার হার্নিয়া অপারেশন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নার্সরা বসে বসে গল্প করেন। রোগীর কোনো সমস্যা দেখতে আসেন না।

বগুড়া থেকে আসা কিডনি অপারশনের রোগী লুৎফর রহমান বলেন, নার্সদের দায়িত্ব সকালে এসে রোগীর প্রেসার মাপা। কিন্তু গত চারদিন ধরে ভর্তি হয়েছি। একবারও কেউ প্রেসার মাপতে আসেনি।

কোনো সমস্যার জন্য নার্সদের ডাকলে তারা উল্টো ধমক দেন। স্টাফ নার্সরা তাদের রুমে বসে থেকে শিক্ষানবিশদের দিয়ে সব কাজ করান। এতে অনেক রোগীরই সমস্যা দেখা দেয়, যোগ করেন সার্জারি মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সাবিনা।

রোববার সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গেলে রোগী ও স্বজনেরা নার্সদের বিরুদ্ধে এমন নানা অভিযোগের কথা শোনান।

শুধু নার্স নন, চিকিৎসকরাও নিয়মিত ওয়ার্ডে আসেন না বলে অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।

সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী মাজেদা খাতুন বলেন, শনিবার (২৭ মে) সকালে ডাক্তার এসে কিছু পরীক্ষা করাতে বললেন। তখনই পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট আনা হয়েছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ডাক্তারের খবর নাই। একই অভিযোগ মাসুদা খাতুন, ফুলমালা ও বয়োবৃদ্ধ মজিরন বেওয়ারও।

রোগীর সঙ্গে আসা পারভিন খাতুন জানান, শনিবার তার নানি মজিরন বেওয়াকে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো চিকিৎসক তাকে দেখেনি।

১০ বার ডাকলেও রোগীর কাছে আসেন না নার্স

শুধু সার্জারি ওয়ার্ড নয়, একই অভিযোগ গাইনি, শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধেও।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন স্টাফ নার্স বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করছি।

সিভিল সার্জন ডা. শেখ মনজুর রহমান নিজেই এ হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলানিউজকে বলেন, সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এখানে লোকবল বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি।

তিনি বলেন, সার্জারি বিভাগে দু’জন রেগুলার কনসালট্যান্ট ছাড়াও শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের একাধিক সহকারী অধ্যাপককে ট্যাগ করা হয়েছে। এখানে চিকিৎসক সংকট থাকার কথা না। প্রশ্ন হলো- তারা ঠিকমতো অফিস করেন কি না। গোয়ালে গরু থাকলেও দুধ দিচ্ছে না। মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৫৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারা কখন আসেন, কখন যান, কে তাদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এসব কিছু ভাবনার বিষয়।

তিনি আরো বলেন, এসব বিষয় নিয়ে রোববার সকালে মিটিং করা হয়েছে। মিটিংয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. উদয় নারায়ণ মোহন্তকে চিকিৎসকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানুষ যাতে সঠিকভাবে সেবা পায়, দ্রুত সে ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।