ঢাকা, রবিবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

বিষণ্নতায় বাড়ছে আত্মহত্যা ও বিবাহ বিচ্ছেদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
বিষণ্নতায় বাড়ছে আত্মহত্যা ও বিবাহ বিচ্ছেদ

আত্মহত্যা বা বিবাহ বিচ্ছেদের ক্রম বর্ধমান হারের পেছনে মানসিক সমস্যা প্রধাণত দায়ী। ব্যক্তির বিষণ্নতার কুপ্রভাব পড়ছে জীবনে, পরিবারে। নিভে যাচ্ছে জীবন প্রদীপ। তছনছ হচ্ছে সংসার নামের সাজানো বাগান।

গত কয়েক দিনে সেলিব্রেটিদের বিবাহ বিচ্ছেদ, আত্মহত্যা, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াসহ বেশ কিছু রিপোর্ট বাংলানিউজ-এ প্রকাশ পেয়েছে। উদ্বেগ দেখা গেছে অনেকের চোখে-মুখে।

বেশ বড় একটি সামাজিক সমস্যা রূপে বিষয়টি ভাবাচ্ছে সবাইকে।

দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগে আক্রান্ত

মানসিক সমস্যা বৃদ্ধির একটি নমুনা পাওয়া গেল কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে। সপ্তাহে একদিন (শুক্রবার) একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এখানে আসেন। একদিনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি প্রায় তিন শ’ রোগি দেখেন। এক মাসের আগে তার সিরিয়াল পাওয়া যায় না!

শহরের আখড়া বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মওলানা মুহাম্মদ তৈয়ব বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় হাসপাতালে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ পদ শূন্য থাকায় বহু রোগি চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন।

মানসিক রোগ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, সমস্যাটি অনেকে ধরতেও পারেন না। জিনে-ধরা বা খারাপ-বাতাস-লাগা বলে মনে করেন অনেকেই। কুসংস্কারের কারণে ভুল চিকিৎসায় বহু রোগির জীবন বিপন্ন হচ্ছে।

ফেসবুক, দ্রুততর জীবন, আশাভঙ্গ ও হতাশায় বহু মানুষ আজকাল মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোগিদের মাঝে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। মূলত পরিবার ও সমাজের আঘাত ও মনোযোগহীনতায় মানসিক রোগ জন্ম নেয়। রোগ চরমে পৌঁছুলে নেশাসক্তি,  আত্মহত্যা ও বিচ্ছেদের মতো দুর্ঘটনারও সৃষ্টি হয়। ঘটে যায় বিয়োগান্ত পরিণতি।

বাংলাদেশে বিষণ্নতাসহ (Depression) নানা ধরনের মানসিক সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করলেও একে থামানোর কোনো উদ্যোগ নেই। এ ব্যাপারে দেশের সাধারণ মানুষের কথা বলা বাহুল্য। চিকিৎসকরাও যথেষ্ট মনোযোগী নন। শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যগত পরিচর্যাও যে একটি জরুরি স্বাস্থ্যগত দায়িত্ব, তা পরিবার বা চিকিৎসকরা আমলে নেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীর মনের খোঁজ বিশেষ একটা নেন না। মানুষের সাথে বৃক্ষ ও প্রকৃতির সংযোগ ঘটিয়ে জীবনকে ইতিবাচক এবং মানুষকে আশাবাদী করারও বিশেষ তৎপরতা নেই।

বিচ্ছিন্ন, আত্মকেন্দ্রিক দ্বীপের মতো এক একটি পরিবারে নানা বয়সের মানুষ একাকী জীবন কাটাচ্ছে। কারো মনের খোঁজ নেওয়ার সময় নেই কারোই। সন্তানের মন জানে না পিতামাতা। বাপ-মায়ের অনুভূতির মূল্য নেই সন্তানের কাছে। এমনই এক দুর্বিষহ দূরত্বে তৈরি হচ্ছে নানা মানসিক সঙ্কট, সমস্যা ও বিষণ্নতা। গড়ে উঠছে বিপজ্জনক পরিস্থিতি। আত্মহত্যা, বিচ্ছেদ, মাদকাসক্তি, নেশাগ্রস্ততা।

আমরা যদি আমাদের চারপাশের প্রিয়জন ও প্রিয় মানুষের মনের খোঁজ না রাখি, তাহলে কে আর রাখবে! কে ঠেকাবে তাদের বিপর্যয় ও পতন!!

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।