কলেজে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও আধুনিক ল্যাব ছাড়াও রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ ক্লাসরুম। প্রত্যেক ব্যাচের মেনটরশিপ ও কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ড্রেসকোড।
মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন একাডেমিক বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সাথে কথা বলেছেন মেডিকেল কলেজ সমূহের পরিচালক ডা. মো. তরীকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, শিক্ষক এবং পরিচালনা বোর্ডের পরম আন্তরিকতায় শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য মেডিকেল কলেজে ৮টা থেকে আড়াইটা রুটিন মতো একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হলেও এখানে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ছাত্রীরা ক্লাস করার সুযোগ পান। রাত ৯টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকে। ছাত্রীরা ক্যাম্পাস থেকেই পড়াশোনা শেষ করে বাসায় যেতে পারেন।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আফিকুর রহমানের নেতৃত্বে মগবাজার ক্যাম্পাসে রয়েছেন ১৪৩ জন শিক্ষক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এমএস নাগ, সার্জারিতে অধ্যাপক আবু আহমেদ আশরাফ আলী, গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম, শিশু বিভাগের অধ্যাক হামিদুর রহমান, অধ্যাপক লুৎফুল কবির, ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আফিকুর রহমান,ঢাকা মেডিকেলের রেডিওলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক এমএ কুদ্দুস, বায়োকেমিস্ট্রির অধ্যাপক বিলকিস বেগম ফরেনসিক বিভাগে অধ্যাপক টিসি দাস প্রমুখ।
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত ৫ বছর ব্যাপী এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষাদান ও ডিগ্রি প্রদান করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য সম্মিলিত নির্ধারিত পরীক্ষার মেধাক্রম অনুসারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।
পাঠ্যবইয়ের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে ক্যাম্পাসে রয়েছে মনোরম একটি লাইব্রেরি। লাইব্রেরিয়ান আশরাফুন্নেসা শওকত বললেন, পাঠ্যবইয়ের সংগ্রহ প্রায় ৫ হাজার। এছাড়া অন্যান্য বই ও ম্যাগাজিনও রয়েছে। লাইব্রেরিতে একসাথে ১০০ জন শিক্ষার্থী পড়তে পারেন।
কলেজ ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হয়। একারণে ছাত্রীরা সময় নষ্ট করতে পারেন না। ছাত্রীদের জন্য মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ। কারো প্রয়োজন হলে ক্যাম্পাসের মোবাইল থেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। তুলনামূলক দুর্বল ও হতাশাগ্রস্তদের জন্য রয়েছে মেনটর ও কাউন্সেলিং সুবিধা।
প্রতিষ্ঠানে স্টুডেন্টস রিপ্রেজেন্টেটিভের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে পরিচালক তরীকুল ইসলাম বলেন, ক্লাসের সবচে মেধাবীকে এবং ভোটের মাধ্যমে আরেকজনকে নির্বাচন করা হয়। প্রত্যেক সপ্তাহে তাদের সাথে বসে সমস্যার কথা শুনে সমাধান করি।
ছাত্রীদের মাধ্যমে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব শিক্ষকের কাছে সবাই আনন্দের সাথে শিখতে পারে তারাই সেরা শিক্ষক। এমন শিক্ষকরাই ক্লাস নেন।
কলেজের পঞ্চম ব্যাচের ছাত্রী ঋতুপর্ণা দাস পাল বাংলানিউজকে জানান, মেডিকেল শিক্ষায় আদ-দ্বীন অনন্য। এখানে যেন মাতৃছায়ায় আমরা শিখতে পারছি। যে কারণে মেডিকেল শিক্ষা কঠিন মনে হয়নি কখনো।
দেশি ছাত্রীদের পাশাপাশি বিদেশি ছাত্রীরাও এখানে পড়ছেন জানিয়ে পরিচালক বললেন, কাশ্মীর থেকে এসেছেন ৩৪ জন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে ই-মেইলে পাঠানো হয় ফলাফল।
শিক্ষার্থীদের বইপুস্তক, আসা যাওয়া, থাকা খাওয়া এবং আনুষঙ্গিক খরচসহ এই ক্যাম্পাসে সর্বোমোট ২৫ লাখের মতো খরচ হয় বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
পরিচালক বলেন, এখানে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রায় নিখরচায় পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
মগবাজার ছাড়াও কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ, খুলনায় আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ ও যশোরে রয়েছে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ। কেরানীগঞ্জে তিনটি ব্যাচে ১৪০ জন, খুলনায় দুটি ব্যাচে ৮১ জন এবং যশোরে আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়টি ব্যাচে ২৯০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজে সব মিলে ১০ লাখ টাকা খরচের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করতে পারেন একজন শিক্ষার্থী। এখানে ভর্তি ফি ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
বর্তমানে মগবাজার ক্যাম্পাসে ৪৫০ জন ছাত্রী রয়েছেন। এখানে নবম ব্যাচ চলমান। প্রতিবার ৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন। শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকই আবাসিক সুবিধা পান। তবে খুলনা ও কেরানীগঞ্জে শতভাগ আবাসিক সুবিধা রয়েছে।
ক্যাম্পাসগুলোতে প্রতি সকালে অ্যাসেম্বলি ও প্রেয়ার হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সে সময় শিক্ষার্থীদের রোল কল ও শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।
এই মেডিকেল কলেজের ক্লাসরুমগুলো শীতাতপ, মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি সম্বলিত ও উন্নত আসন-ব্যবস্থা সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এমআইএইচ/জেএম