এএফসি হেলথ ফরটিস এসকর্টস এর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কনসালটেশন সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) স্কাইপিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভারতের বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. অশোক শেঠ এর পরামর্শ নেন তিনি।
প্রায় মিনিট দশেক ধরে তিনি কথা বলেন দিল্লি ফরটিস এসকর্টস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান এন্ড চিফ কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে। এর আগে তার হার্টের বিভিন্ন রকম টেস্টের রিপোর্টগুলো স্ক্যান করে দিল্লি পাঠান বাংলাদেশি মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবু সাদিক আবদুল্লাহ (রাসেল)।
স্কাইপিতে যুক্ত হওয়ার পূর্বে ডা. রাসেল তার রোগের সম্পূর্ণ বিবরণ ভালোভাবে অবগত হন। সেই সামারিও দিল্লিতে পাঠিয়ে দেন। স্কাইপিতে রোগীর সঙ্গে বাংলাদেশি এই চিকিৎসকও অংশ নেন। খানিকটা মেডিকেল বোর্ডের মতো ত্রি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করা হয় বলে জানান তিনি। কামাল উদ্দিন আহমেদের মতো আমিনুর রহমান খানও ভূয়সী প্রশংসা করেন এএফসির এই সেবার। আমিনুর রহমান খান বলেন, হৃদরোগে ইন্ডিয়ার এক নম্বর চিকিৎসক ডা. অশোক শেঠ। ইন্ডিয়া গিয়েও তার সাক্ষাত পাওয়া কঠিন। সেখানে খুব সহজেই তার সঙ্গে কথা বলে ট্রিটমেন্ট পেলাম। অনেকটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।
আমিনুর রহমান খান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হার্টের রিং বসিয়ে নেন দিল্লি গিয়ে। এক বছর চেকআপের জন্য দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি থাইল্যান্ডে চেকআপ করলে ডাক্তার তাকে একটি ঔষধের বিষয়ে রিং বসানো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলেন।
এরপর দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই জানতে পারেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপের কথা। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমবার হাজির হন। চিকিৎসকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় তার। এরপর ডাক্তার তাকে কিছু ঔষধের ডোজ কমিয়ে গিয়েছেন।
ভিডিও কনফারেন্সে আমিনুর রহমান খান দিল্লি যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে ডা. শেঠ তাকে নিরুৎসাহিত করেন। সব সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনে তবেই পরামর্শ দিয়েছেন। আর এতেই তার ভয় কেটে গেছে। ভিডিও কনফারেন্সে ডা. শেঠ এর সঙ্গে কথা বলার আগে বাংলাদেশি চিকিৎসক রাসেল দীর্ঘক্ষণ ধরে তার রোগের সামারি তৈরি করেন। সেখানে অনেক বিষয়ে ধারণা পান তিনি। এভাবে একই সঙ্গে দু’জন চিকিৎসকের সেবা পাওয়া সম্ভব হলো বলে জানান তিনি।
আমিনুর রহমান খান বলেন, দিল্লি যাওয়া, ভিসা পাওয়াসহ নানান বিষয়ে টেনশনে ছিলেন। বুকের উপর চেপে থাকা পাথর নেমে গেলে যেমন প্রশান্তি হয় এই কনফারেন্সের ফলে তারও এমন অনুভূতি হয়েছে। এখন আর দিল্লি যেতে হচ্ছে না তাকে। লাখ টাকা খরচ থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদও সম্প্রতি হাজির হয়েছিলেন। তিনিও সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
এখানে শুধু ডা. অশোক শেঠ নন, দিল্লির ফরটিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের নেফ্রোলজি এন্ড রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. বিজয় খের, ইরোলজি এন্ড রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. রাজেশ কে এহলাওয়াত, লিভার এন্ড ডাইজেস্টিভ ডিজিজেস ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এন্ড চিফ ডা. অজয় কুমার, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এন্ড হেপাটোবিলিয়ারি সাইন্সেস’র ডিরেক্টর ডা. ভিভেক জিভ, দিল্লি ফরটিসের ডিরেক্টর (ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি) ডা. অনিল সাক্সেনা, ডিরেক্টর (পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি) ডা. এস রাধা কৃষণান, ডিরেক্টর (নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলজিও) ডা. সামীর শ্রীবাস্তব, চিফ কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. ভিভেক কুমার এবং খুলনায় অবস্থিত ফরটিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের চিফ কার্ডিওলজিস্ট ডা. মো: কাজী আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রাম ফরটিসের চিফ কনসালটেন্ট এন্ড ক্যাথল্যাব ডিরেক্টর ডা. এএম শফিকসহ অনেক চিকিৎসক এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।
নির্ধারিত ডাক্তারের বাইরেও যে কোন রোগী ফরটিস নেটওয়ার্কের তার পছন্দের যে কোন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে চান তার সুবিধা রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় প্রয়োজন হয় বলে জানান এএফসি হেলথ’র হেড অব ব্র্যান্ড এন্ড কমিউনিকেশন তৌফিক হাসান।
প্রত্যেক সোমবার রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় এই ভিডিও কনফারেন্সিং হয়ে আসছে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। দিনদিন রোগীদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি চিকিৎসার নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই সেবার যারা একবার ট্রিটমেন্ট নিয়েছেন তারা ফলোআপ এবং যারা শঙ্কায় আছেন তারাও তাদের মেডিকেল পরীক্ষা জমা দিয়ে নিজের স্বাস্থ্যের হালহকিকত জেনে নিতে পারেন সহজেই। বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে একে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেবা গ্রহীতারা।
এএফসি (অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল) হেলথ লিমিটেড’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সাইফুর রহমান রোচেস্টার ইউনির্ভাসিটি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রসেস সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করার সময় দেশের জন্য কিছু করতে মনস্থির করেন।
দেশে ফিরে ঔষধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য মুন্সীগঞ্জে এএফসি হেলথ লিমিটেডের ফ্যাক্টরি স্থাপন করেন। কোম্পানিটি সুনামের সঙ্গে কাঁচামাল উৎপাদন করে আসছে। অল্পদিনের ব্যবধানে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ বেশ কয়েকটি দেশের বাজারে ব্যবসা প্রসার করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি এখন উন্নত মানের ঔষধ আবিষ্কারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ জন্য তারা ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।
এছাড়া ভারতের চেইন হাসপাতাল ফরটিসের সঙ্গে চুক্তির আওতায় খুলনা, চট্টগ্রামে অত্যাধুনিক হার্ট ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে তারা। যা সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এসআই/আরআই