হাসপাতালের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ২৮ নম্বর বেডে গত শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে চিকিৎসা চলছে শিশুটির। তবে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে একেবারে নিথর হয়ে গেছে।
বাবা জাকির বলেন, ‘বাচ্চার ঠাণ্ডা লাইগচে। স্যালাইন দিচে। রাতরে একটু ভালো হইচে। এরপরে আর কোনো চিগিসসা নাই। নার্সরা আরও দুর্ব্যবহার করেন। আমরা চাই, বাচ্চাকে আদদিনে (আদ্-দ্বীন হাসপাতাল) নিয়া যাই, তাও দিতাচে না। বাইচ্চার খানা, মার খানা নিষেধ কইচ্চে। বাইচ্চা এখন সাদা হইয়ে গিইচে’।
হঠাৎ করেই শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ফলে হাজারও শিশু রোগী-স্বজনের ভিড় এখন ঢাকা শিশু হাসপাতালে। ভর্তি হওয়া শিশুদের অধিকাংশই নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ায় ভুগছে।
কর্তৃপক্ষ জানান, ৬৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন শিশু আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নেয়। গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে শীতজনিত রোগে আক্রান্তরা বেশি আসছে। এখন আউটডোরে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তাদের মধ্যে ভর্তি করা লাগছে ১৫০ জনকে।
চিকিৎসক-নার্সরা জানান, নবজাতক শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়ার প্রবণতা বেশি। আর ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী স্কুলগামী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টে। হঠাৎ শীত, অনাবৃষ্টি ও ধুলা-বালির কারণে তাদের অ্যাজমা-শ্বাসকষ্ট বেড়েছে।
রোগীদের অত্যাধিক ভিড়ে বর্তমানে হাসপাতালে বেডের সংকট দেখা দিয়েছে বলেও জানান তারা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, অক্টোবরের শুরুতে হঠাৎ গরম বাড়ে, এরপরেই শুরু হয় বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাতের পরে শীত বাড়তে থাকে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনে শিশুদের ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এখন আগের তুলনায় দ্বিগুণ সংখ্যক শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে।
নবজাতকেরা নিউমোনিয়ায় আর স্কুলগামী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে অ্যাজমায়। কারণ, ধুলা-বালি মাড়িয়ে স্কুলে যাচ্ছে এসব শিশু।
শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় পরামর্শ দিয়ে ডা. রিজওয়ানুল বলেন, শিশুদের ত্বক স্পর্শকাতর। গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। রুমে রুম হিটার রাখলে মঙ্গল। কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া থেকে শিশু যখন ডি-হাইড্রেশনে ভুগবে, তখন বেশি করে তরল খাবার, সবুজ শাক-সবজি ও ফল-মূল খাওয়াতে হবে। স্কুলগামী শিশুদের মাস্ক পরার অভ্যাস করাতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর