ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

একজন দরদী ডাক্তার জাকারিয়া স্বপন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
একজন দরদী ডাক্তার জাকারিয়া স্বপন

আশির দশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র মো: জাকারিয়া স্বপন মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে নিজের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন রক্তদাতা সংগঠন ‘সন্ধানী’।

তখন আমি ঢাকাস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। থাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলে।

নেত্রকোনার ছেলে হিসেবে তিনি এলেন আমার কাছে; উদ্দেশ্য মুমূর্ষু রোগীদের জীবন বাঁচাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত সংগ্রহ করা। তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হয়ে তাঁর সংগঠনের সদস্যও হয়ে গেলাম।  

আত্মীয়ের জন্য রক্ত দান করলেও নিজের শরীর থেকে রক্ত বের করে ব্যাগ ভরে অন্যকে দান করার মানসিকতা এবং সাহসিকতা তখনো সমাজে অতোটা দেখা যেতো না। শুরু হলো কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি এস সি মাঠে ডোনারও পেয়ে গেলাম ময়মনসিংহের সাহসী ছাত্রী কলাবাগান বশির উদ্দীন রোডে বসবাসরত মেজর মাহফুজ স্বপন সাহেবের ছোট বোন শেলী এবং শিরিন (অনাবাসিক), মহসিন হলের বাবুল ও আরো অনেককে।  

ডোনারদের সন্ধানী কোটপিন, কোমল পানীয় আর ডোনার কার্ড প্রদান করা হলো। ব্লাড ডোনেশন প্রোগ্রামটি জাতীয় টেলিভিশন ও প্রায় সকল পত্র-পত্রিকায় প্রচারিত ও প্রকাশিত হওয়ায় আমরা উৎসাহিত হলাম এবং পরবর্তী সময়ে ডা. জাকারিয়া স্বপনের নেতৃত্বেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির কার্যালয় বাংলামোটর ঢাকার টি এম সি বিল্ডিংসহ বিভিন্ন স্থানে এই রক্তদান কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকলাম।

রক্তদান ভীতিকর নয়, আনন্দময় কাজ এবং রক্তদানকে একটা সামাজিক কর্মসূচি হিসেবে দাঁড় করানো এবং একে জনপ্রিয় করার আন্দোলনের পূরোধা ছিলেন ডা. জাকারিয়া স্বপন।  

পেশাগত কারনে দূরে থেকেও তাঁর সাথে ছিলো আমার নিখাঁদ বন্ধুত্ব। আমাদের দুজনেরই ডাক নাম "স্বপন"; তাই আমরা পরস্পরকে মিতা বলে সম্বোধন করতাম। তাঁর সাথে শেষ দেখা কয়েক বছর আগে সেন্ট্রাল হাসপাতালের নীচতলায় তাঁর চেম্বারে।

ইমার্জেন্সি রোগী হিসেবে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকেই দেখি আমার মিতা। হতভম্ভ দুজনেই,  অনেক বছর পর দুজনের দেখা। তিনি মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত, বিদেশে চিকিৎসা শেষে কেবল দেশে ফিরেছেন, দেশে ফিরে সেদিনই তাঁর চিকিৎসা-সেবার প্রথম কর্মদিবস। হঠাৎ করে তাঁর সাথে দেখা হওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলেও তাঁর জন্য দুঃখ হলো।

দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা-সেবা দিয়ে সাহায্যকারী এই মহান ব্যক্তি নিজেই মরণব্যাধি ক্যান্সারের ধকল সয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।

ডা. জাকারিয়া স্বপন ছিলেন এক শিক্ষকের সন্তান। তাঁর জীবনের শুরুটাই হয়েছিলো মুমূর্ষু মানুষের জন্য রক্ত দান ও আর্তমানবতার সেবা দিয়ে, যা তাঁর সমগ্র জীবনব্যাপী ব্যাপৃত। দেশে মানবিক চিকিৎসা-সেবার এই সংকটকালে ডা. জাকারিয়া স্বপনকে অকালে হারানোর ক্ষতি অপূরণীয়। পরম করুণাময় আল্লাহ তালার কাছে আমি তাঁর জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস প্রার্থনা করছি।

উল্লেখ্য, ডা. জাকারিয়া স্বপন সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) ছিলেন ।

# লেখক: ব্যবসায়ী, সমাজসেবী।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।