ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিনামূল্যে জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষার সুযোগ আদ্-দ্বীনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৮
বিনামূল্যে জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষার সুযোগ আদ্-দ্বীনে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বড় মগবাজারে অবস্থিত আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসাপাতাল বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা সপ্তাহব্যাপী বিনামূল্যে নারীদের জরায়ুর মুখে ক্যান্সার পরীক্ষার সেবা নিয়ে চালু করেছে বিশেষ ক্যাম্প। 

এই স্বাস্থ্য ক্যাম্পে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জরায়ুর মুখে ক্যান্সার শনাক্ত করা যাবে। এই ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য আদ্-দ্বীনে কলপোস্কপি, ভায়া ও প্যাপ স্মেয়ার করানো হচ্ছে বিনা পয়সায়।

শনিবার (৭ এপ্রিল) থেকে আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিশেষ এই সেবা চালু থাকবে।

জরায়ুর মুখে ক্যান্সার শনাক্তে আদ্-দ্বীনের উদ্যোগ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় হাসপাতালের পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন ও গাইনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. হোসনে আরা খাতুনের সঙ্গে।  

এ বিষয়ে পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, এবারের স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সবার জন্য সর্বত্র’। এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আমরা এবার নারীদের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করেছি। যেহেতু নারীরা অনেক সময় টাকা ও পারিবারিক অসযোগিতার কারণে চিকিৎসা নিতে চান না। আবার অনেকে লজ্জবোধের কারণেও ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তাই আমরা লিফলেটের মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছি যে, আসুন বিনামূল্যে আপনার জরায়ুর মুখের ক্যান্সার পরীক্ষা করে নিন। প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেও এ মরণব্যাধি থেকে বাঁচা যায় সেই বার্তাটিই আমরা দিতে চাই।  

ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, এখানে স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে ক্যান্সার আছে কি না। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটা নির্মূল করা সম্ভব।

অন্য সময় আদ্-দ্বীন হাসপাতালে প্যাপ স্মেয়ার করাতে লাগে ৫শ’ টাকা। আর বাইরে কোথাও কোথাও ১ হাজার টাকা লেগে যায়। এসব সেবা একদম বিনা পয়সায় দিচ্ছে আদ্-দ্বীন হাসপাতাল। স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে কারো জরায়ুতে ক্যান্সার ধরা পড়লে আদ্-দ্বীনে অত্যন্ত স্বল্প খরচে অপারেশন বা চিকিৎসা করানো যাবে। আবার কোনো রোগী যদি অভাবী হন তাহলে তার অপারেশন খরচসহ সবকিছুই বিনামূল্যে করা হবে।

জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ কেমন এর জবাবে তিনি বলেন, এখানে ডাক্তার দেখাতে মাত্র ১৬০ টাকা আর অপারেশন খরচ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাগবে। এখানে বেড ভাড়া লাগে না, রোগীকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়।  

জরায়ুর মুখে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ আছে কি না তার জবাবে তিনি বলেন, কিছু লক্ষণ আছে তবে আমাদের নারীরা বিষয়টি বলতে চান না বা জানলেও এড়িয়ে চান। যেমন: তলপেটে ব্যথা, মিলনের সময় রক্ত যাওয়া। আমাদের এখানে ১৪ জন নারী গাইনোকলোজিস্ট আছেন। তাদের সঙ্গে কাউন্সিলিং করে সঠিক সেবা নিতে পারবে।

রোগের ঝুঁকি ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আদ্-দ্বীন হাতপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. হোসনে আরা খাতুন বলেন, স্ক্রিনিং হচ্ছে একটা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ডায়গনোসিসের আগেই রোগের একটা সাংকেতিক চিহ্ন ধরা পড়ে। রোগ নির্ণয় করে শুরুতে অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দিলে এটির বিস্তার ঘটবে না। স্ক্রিনিং সাধারণত ২১ বছর থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীদের করা হয়।

স্ক্রিনিং কি
জরায়ুর মুখে লালা বা কোষ স্ক্র্যাপ করে নিয়ে স্ক্রিন করে দেখা হয় যে ওই টিস্যুগুলোর পরিবর্তন হয়েছে কিনা। পরিবর্তন হলে বুঝতে হবে এটা আরও ১০ বছর বা তার চাইতে বেশি সময় পর ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে পারবে।  

প্যাপ স্মেয়ার বা ভায়া 
প্যাপ স্মেয়ার বা ভায়া হচ্ছে একটা ভিজ্যুয়াল ইন্সিপেকশন উইথ অ্যাসিটিক এসিড ৩ থেকে ৫ শতাংশ। এটি সহজ ও ব্যথামুক্ত পরীক্ষা।  

কিভাবে করা হয়
অ্যাসিটিক এসিড বা ভিনেগার তুলায় ভিজিয়ে জরায়ুর মুখে লাগানো হয়। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে যদি দেখা দেখা যায় কোথাও টিস্যু অস্বাভাবিকভাবে জন্মাচ্ছে বা অস্বাভাবিক হচ্ছে তখন সেই জায়গাটা সাদা হয়ে যাবে। সেটা ভায়া পজেটিভ। ভায়া ও প্যাপ স্মেয়ার পজেটিভ হলে কলপোস্কপিতে পাঠাতে হবে।

কলপোস্কপি 
এটি প্যাপ স্মেয়ার, ভায়ার মতই প্রায়। প্যাপ স্মেয়ার পদ্ধতিতে খালি চোখে দেখা যায় আর কলপোস্কপি ম্যাগনিফাইন দিয়ে দেখতে হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে জায়গাটা অস্বাভাবিক হয়েছে ওখান থেকে টিস্যু নিয়ে বায়োস্কপি করা।  

কত সময় লাগে
ভায়া করতে ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগে। আর প্যাপ স্মেয়ারের ফল পেতে প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। কলপোস্কপি করতে একটু বেশি সময় লাগে।

জরায়ুর ক্যান্সারের কারণ
এটা ছোঁয়াচে না। বহুগামিতার কারণে এই ক্যান্সার হতে পারে। হিউম্যান পেপোনোমা ভাইরাসে (এইচপিভি) আক্রান্ত তাদের সহচর্যে গেলে আশঙ্কা থাকে। তবে স্বামী-স্ত্রীর মিলনে আশঙ্কা কম। অল্প বয়সে বিশেষ করে ১২-১৪ বছর বয়সে বিয়ে হলে এই রোগের আশঙ্কা বেশি। সুস্থতার জন্য ২১ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত প্রতি তিন মাস অন্তর স্ক্রিনিং করতে হবে।

যোগাযোগ-০১৭১৩-৪৮৮৪১৮।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৮
এসএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।