ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দেশের ১ কোটি লোক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, অধিকাংশই জানে না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
দেশের ১ কোটি লোক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, অধিকাংশই জানে না বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। ছবি: লোগো

ঢাকা: বিশ্বে হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩২ কোটি ৫০ লাখ। যার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রায় এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি অথবা হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। তবে, এদের অধিকাংশই জানেন না যে তারা এই ভাইরাস বহন করে চলেছেন। 

সম্প্রতি হেপাটোলজি সোসাইটির হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি এর ওপর চালানো এক জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।  

জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫.১ শতাংশ হেপটাইটিস বি এবং ০.২ শতাংশ হেপাটাইটিস সি’তে আক্রান্ত।

আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ এইচবিভি বহন করছেন। অর্থাৎ প্রতি ৫০০ লোকের মধ্যে ১ জন এইচসিভিতে আক্রান্ত। দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ এইচবিভি অথবা এইচসিভি জীবাণু বহন করছেন। এদের মধ্যে ৫৭ লাখ পুরুষ এবং ২৮ লাখ নারী।

হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে দেশের ৬০ ভাগ মানুষ লিভার সিরোসিসে ভোগেন। অপরদিকে, হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের কারণে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন ৩০ ভাগ। এদিকে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ৬৫ ভাগ এবং ১৭ ভাগ আক্রান্ত হচ্ছেন সি ভাইরাসের কারণে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাবিশ্বে ৩২ কোটি ৫০ লাখ অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন এই রোগে আক্রান্ত। তারা শরীরে এই ভাইরাস বহন করেই জীবনযাপন করছেন এবং তাদের শরীরে এই জীবাণু থাকা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাও নেই। অসচেতন জনগণের শুধুমাত্র লিভার সিরোসিসের উচ্চ ঝুঁকিই থাকে না বরং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকিও থাকে। বিশ্বে প্রতি বছর হেপাটাইটিসে প্রায় ১৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তবে টিকার মাধ্যমে হেপাটাইটিস সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। আবার সময়মতো শনাক্ত করা গেলেও তা নিরাময়যোগ্য। বাংলাদেশের সব জায়গায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত সুলভে এই চিকিৎসা ও টিকা পাওয়া যায়।  

এ পরিস্থিতিতে হেপাটাইটিস সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে শনিবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ২০১৮। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় 'Eliminate hepatitis- find the missing millions.' দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে আলাদা বাণী দিয়েছেন।  

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ হেপাটাইটিস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ রোগ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকায় দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে মাদকাসক্তদের মাদক গ্রহণে একই সিরিঞ্জের বার বার ব্যবহার এবং অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালন এই রোগ বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই এ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে এর প্রতিরোধ সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা গেলে হেপাটাইটিস নির্মূল সম্ভব।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূল করা সম্ভব হবে। ছবিতে হেপাটাইটিস আক্রান্তের লক্ষণ ও ভাইরাস সম্পর্কে বোঝানো হয়েছে ।  ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিরাময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। আমরা হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিরাময়ের জন্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। দেশের লিভার বিশেষজ্ঞগণ লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীদের আধুনিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।

সারাবিশ্বে বিশেষ করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশেও এ দু’টি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা গণমুখি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করেছি। নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০১ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৮
এমএএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।