ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘অন্যসব ওষুধ বাদ দিয়ে এখানকার ওষুধই খাবো’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
‘অন্যসব ওষুধ বাদ দিয়ে এখানকার ওষুধই খাবো’ আদ-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হাসপাতালে রোগীরা

ঢাকা: ফরিদা বেগমের বয়স ৬০ ছাড়িয়ে গেছে। বার্ধক্যজনিত কারণে আকড়ে ধরেছে অসুস্থতাও। তবে মুখে তার এখনো সেই মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে, যে হাসি দেখে শাশুড়ি মা তার দুই হাতে উপহার দিয়েছিলেন সোনার চুড়ি।

সময় বদলেছে। ফরিদা বেগমের শাশুড়ি গত হয়েছেন অনেক দিন।

ফরিদা বেগম এখন নিজেই শাশুড়ি। স্বামী মারা যাবার পর স্বচ্ছল সংসার একটু একটু করে হয়ে পড়ে অস্বচ্ছল। বেড়েছে বয়স, বেড়েছে অসুস্থতা। কোমরের ব্যথায় একা একা হাঁটতে কষ্ট হয়। তাই কাউকে না কাউকে এখন সাথে রাখতে হয় সবসময়ই।

মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পোস্তগোলার আদ-দ্বীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হাসপাতালে নাতি ফাহিমকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছিলেন ফরিদা বেগম। সেখানেই বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার।

রাজধানীর আরো বেশকিছু হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিক ঘুরে এখানে এসেছেন এখানে তিনি। এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে তিনি বলেন, ডাক্তার বুজি বেশ ভালো। অনেক কথা বলেছে আমার সাথে। দেখেছেও অনেকক্ষণ ধরে আর একদম ফ্রিতে! অন্য জায়গায় এতটা সময় ধরে কেউ এত ভালো করে দেখেনি। আমার অনেক ভালো লেগেছে, তাই অন্য সব ওষুধ বাদ দিয়ে এখানকার ওষুধই খাবো।

শুধু ফরিদা বেগম নয়। হাসপাতালে কথা হয় নতুন মা হওয়া মাহমুদা ইসলাম সাথীর সঙ্গেও। অন্য আর দশজন যখন গর্ভাবস্থার পর সিজারিয়ান পদ্ধতিটিই বেছে নেন, তখন তিনি এড়িয়ে গেছেন সে পদ্ধতি।

কথা হলে মাহমুদা বলেন, সিজারিয়ান পদ্ধতিটিই বেছে নেবো। কিন্তু এখানে আসার পর ডাক্তার আপারা সিজারিয়ান পদ্ধতি না নেওয়ার জন্যই বলেন। স্বাভাবিক এবং সিজারিয়ানের মধ্যে যে উপকারিতা আর অপকারিতা আছে, সেগুলো সম্পর্কে আমাকে জানান। এরপর ভালো বুঝেই স্বাভাবিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয় এবং এখন আমি প্রায় সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।

এছাড়া অন্য হাসপাতালের তুলনায় এখানে খরচ যেমন অনেক কম, তেমনি সেবাটাও পাওয়া যায় অনেক ভালো। ঠিক যেনো পরিবারের মতো। ডাক্তার আপারাও রোগীর খোঁজ খবর নেন নিজে থেকেই। অন্য বিভিন্ন হাসপাতালে যেখানে নার্সদের মেজাজের কাছে রোগীরা হয়রান হন, এখানে সেটা একদমই নেই বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, গত ০১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১২টি বিভাগে প্রায় দশ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে এখানকার বহির্বিভাগে সাধারণ জনগণ সুযোগ পেয়েছেন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের। আর এ কার্যক্রম চলেছে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।

ফ্রি ক্যাম্পের আওতায় থাকা বিভাগগুলো হলো- শিশু বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, ডায়াবেটিস বিভাগ, সার্জারি, স্ত্রী রোগ ও ধাত্রীবিদ্যা, নাক-কান-গলা, দন্ত, চর্ম, ফিজিওথেরাপি, অর্থোপেডিক্স এবং ইউরোলজি বিভাগ। মঙ্গলবার ফ্রি ক্যাম্প শেষ হলেও ১২টি বিভাগেই চলবে নিয়মিত সেবা কার্যক্রম।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, এখানে গর্ভবতী মায়েদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। অন্য জায়গায় যেখানে স্বাভাবিক ডেলিভারিতেই খরচ পড়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা, সেখানে এ হাসপাতালটি সাত দিনের প্যাকেজ সিস্টেমে স্বাভাবিক ডেলিভারির সেবামূল্য নিচ্ছে মাত্র ৩ হাজার ৯০০ টাকা। আর সিজারিয়ান অপারেশনে ওষুধসহ এর মূল্য আসবে ৮ হাজার ৬০০।

তবে সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, শিশুদের জন্য হাসপাতালের মধ্যেই রয়েছে আলাদা একটি শিশু কর্নার। তবে তাকে ছোট্ট সোনামণি লাবিবের ভাষায় 'শিশুপার্ক' বলাটাই বেশি শ্রেয়। কেননা শিশুদের জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন খেলাধূলার ব্যবস্থাও। একই সাথে হাসপাতালের ভেতরেই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ পোশাকের দোকানে পাওয়া যাবে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত পোশাক। হাসপাতালে আগতদের জন্য রয়েছে রুচিশীল ক্যান্টিন।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সর্বাধিক কম মূল্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয় এ হাসপাতালে। চালু আছে ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা। আর হাসপাতালের ম্যানেজার তাহমিনা নাজনীন খান বলেন, আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি এখানে আসা রোগীদের তাদের পরিবারের মতো করে সেবা দেওয়ার জন্য। তবে গর্ভবতী এবং শিশুদের এ হাসপাতালে একটু বেশিই পরিচর্যা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।