ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

‘সংকটে’ দেশের হৃদরোগ চিকিৎসা

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
‘সংকটে’ দেশের হৃদরোগ চিকিৎসা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট।

ঢাকা: দেশে হৃদরোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার অবস্থাই ‘সংকটাপন্ন’। হৃদরোগ চিকিৎসার প্রধান হাসপাতালগুলোর কোনোটির অপারেশন থিয়েটার (ওটি) বন্ধ, দিনের পর দিন মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কোনোটির, আবার কোনোটিতে নেই রোগীর জন্য পর্যাপ্ত শয্যা।

সব ধরনের হৃদরোগ চিকিৎসার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের সবগুলো ক্যাথল্যাব মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি।

চিকিৎসার জন্য রোগীরা মিরপুরের ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলেও শয্যা সংকটের কারণ দেখিয়ে তাদের ফিরে যেতেই দেখা গেছে।

অথচ এ হাসপাতালগুলো গোটা দেশের হৃদরোগীদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। আর হাসপাতালগুলোর এমন পরিস্থিতির কারণে চরম অসহায় ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন দেশের দরিদ্র হৃদরোগীরা। এতে অনেকে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের দালালদের খপ্পরে পড়ছেন, আর চিকিৎসার নামে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত।

গত ১২ সেপ্টেম্বর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে খোঁজ নিলে জানা যায়, গত তিন দিন ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে আসা কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে না। কারণ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) সংস্কার চলছে।

এ অবস্থা কতোদিন থাকবে সেই বিষয়ে কিছুই বলতে পারছেন না তারা। এতে যেসব রোগীর জটিল ভাস্কুলার সার্জারি, বাইপাস সার্জারি, সিএপিজি, ভালব প্রতিস্থাপন বা চিকিৎসা প্রয়োজন তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রোগীদের দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসা না দিলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।

জানা যায়, শুধু ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের ক্যাজুয়ালিটি ওটি চালু রয়েছে যেখানে পায়ের অস্বাভাবিক শিরার অপারেশন ছাড়া আর তেমন কোনো কাজ করা হচ্ছে না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালের ভর্টিক্যাল এক্সটেনশন হচ্ছে। এতে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে। ফলে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনা এর আগে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও ঘটেছে। এছাড়াও হাসপাতালের ওটি কমপ্লেক্সের সংস্কার চলছে। তাই আপতত খুবই স্বল্পপরিসরে অপারেশন চলবে।

ওটি চালু হতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের ১৫ দিনের মধ্যে ওটি চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর থেকে কিছুদিন বেশিও লাগতে পারে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের তিনটি ক্যাথল্যাব মেশিনের সবক’টিই নষ্ট হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ব্যবহৃত জন্য দু’টি মেশিনের একটি প্রায় দু’বছর ধরে নষ্ট এবং অন্যটিও প্রায় ৬ মাস ধরে নষ্ট। ইতোপূর্বে দু’বার মেরামত করা হলেও এগুলো দিয়ে বেশিদিন কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে বাচ্চাদের জন্য নির্ধারিত পেডিয়াট্রিক ক্যাথল্যাবটিও নষ্ট বেশ কিছুদিন ধরে।

এ কারণে বিএসএমএমইউ’র সব ধরনের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (শিশু কার্ডিওলজি) ডা. মো. জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাডাল্ট মেশিন দু’টি নষ্ট থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি হচ্ছে না। মেশিন দু’টি অনেক পুরানো হয়ে যাওয়ায় মেরামত করেও কাজ চালানো যাচ্ছে না। নতুন ক্যাথল্যাব মেশিন না আসা পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে পেডিয়াট্রিক ক্যাথল্যাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ মেশিনটির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেশিনটির এক্স-রে টিউব নষ্ট হয়ে গেছে। এ টিউবটি ঠিক করতে প্রায় এক কোটি টাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নতুন মেশিন প্রয়োজন বলে মনে করছি।

হৃদরোগ চিকিৎসায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরেই ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অবস্থান। সেখানেও সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা।

হাসপাতালটির সূত্রে জানা যায়, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রোগীদের অপারেশনের পর আইসিইউতে রাখতে হয়। কিন্তু সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটায় অপারেশন স্বল্প পরিসরে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাসান মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করনে এবং গণসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা ডলি বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ঈদের সময় নিয়মিতভাবে হাসপাতালের ওটি, আইসিইউ ইত্যাদি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা হয়। এবারও হয়েছে। ওইসময় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে এখন কোনো সমস্যা নেই।

আইসিইউতে জীবাণু সংক্রমণের কারণে রোগীদের হৃদরোগ হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এমন নয়। আইসিইউতে সিট কম থাকায় ওখানে রেফার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮
এনএইচটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।