ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

কিডনি হাসপাতাল: ডায়ালাইসিস ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
কিডনি হাসপাতাল: ডায়ালাইসিস ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কিডনি চিকিৎসায় দেশের সরকারিভাবে একমাত্র আশ্রয়স্থল ন্যাশনাল ইনস্টিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডু)। দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন রোগীরা।  কিন্তু  এ হাসপাতালটিতে এসে নানা অনিয়মের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিডিনী রোগীদের ডায়ালাইসিসের (এ রোগে আক্রান্তদের বাঁচার একমাত্র উপায়) জন্য ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে সেন্ডর নামের কোম্পানি কাজ শুরু করে। হাসপাতালটির একাংশ নিয়ে সেন্ডরের ডায়ালাইসিস কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম থাকায় স্পর্শকাতর এই সেবাটি পেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা।


 
রোগীদের অভিযোগ, কিডনি হাসপাতালে সেন্ডরের তত্ত্বাবধানে সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিসের পরও রোগীরা সুস্থ থাকতে পারছেন না। এদিকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগ দরিদ্র হওয়ায় খরচের অতিরিক্ত বোঝা তাদের টানা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সেন্ডরের কারণে খরচ বাড়ছে। যার মূল কারণ হিসেবে রয়েছে সঠিকভাবে পরিষ্কার না করে একই ডায়ালাইজার (ডায়ালাইসিস মেশিনের মূল উপাদান) বিভিন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার ও জীবাণুযুক্ত ডায়ালাইসিস ফ্লুইড ব্যবহার বা উৎপাদনের ক্ষেত্রে জিএমপি (গুড মেনুফ্যাকচারিং প্রোডাক্ট) অনুসরণ না করে ব্যবহার করা। রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এভাবে ডায়ালাইসিসের কারণে রোগীদের গায়ে সুঁচ ঢুকানোর সময় অতিরিক্ত হারে ফিস্টুলা নষ্ট হচ্ছে। আর পুনরায় ক্যাথেডা ও ফিস্টুলা ব্যবহার করায় রোগীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
 
বেশ কয়েকদিন ধরেই শাহনেওয়াজ নামে একব্যক্তি তার মাকে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আগে যখন আমরা এ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করিয়েছি তখন সপ্তাহে ৩ বার দিলেই মা সুস্থ থাকবেন। এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বারবার এখানে ভর্তি করতে হচ্ছে।

‘সংশ্লিষ্টরা একই ডায়ালাইজার বিভিন্ন সময় অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। হাসপাতালেই জীবাণুযুক্ত বা নোংরা পরিবেশে ডায়ালাইসিস ফ্লুইড উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে রোগীর ফিস্টুলা নষ্ট হচ্ছে আবার কোনো কোনো রোগীকে সি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।

এখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখে ডায়ালাইজারসহ বিভিন্ন চাহিদা দিলেও সেন্ডর কর্তৃপক্ষ তা পূরণ করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
 
এ বিষয়ে শাহনেওয়াজসহ আরও কয়েকজন রোগীর স্বজন বাংলানিউজকে বলেন, ডায়ালাইসিস ফ্লুইড উৎপাদনের ক্ষেত্রে নোংরা ও জীবাণুযুক্ত স্থান ছাড়াও সেন্ডরের কোনো ফার্মাসিস্ট নেই। রয়েছে একজন ওয়ার্ড বয়। এমনকি ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রমে অভিজ্ঞ কোন নার্সও নেই। ফিস্টুলা সুঁচ নষ্ট করা ছাড়াও তা লাগানোর সময় দেখা যায় জায়গাটি ফুলে যায় আবার খোলার পর অতিরিক্ত হারে রক্ত পড়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কিছু করতে পারে না।
 
একাধিক রোগীর স্বজন বলেন, ডায়ালাইসিসের সময় কোনো রোগী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে জরুরি বিভাগেও নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনও ঘটেছে ডায়ালাইসিসের পর রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লেও নার্সরা বাইরে বাইরে ফেলে রাখে কিন্তু জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার ঘণ্টা ধরে ডায়ালাইসিস দেওয়া হয়। এতে রোগীরা কিছুটা অসুস্থ বোধ করতে পারেন। তবে একটু বিশ্রাম না দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে বেড থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এসবের প্রতিবাদ করলে ডায়ালাইসিস সিডিউল বাতিল করারও হুমকি দেয় সেন্ডরের কর্মীরা।

গোলাম মোস্তফা নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমাদের তো অত টাকা নেই যে, বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা করাবো। এখানে ডায়ালাইসিস করাতে মাত্র ৪৫০ টাকা নেয়। কিন্তু কৌশলে তারা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে।
 
সেন্ডর পরিচালিত ডায়ালাইসিস সেন্টারটির ফ্লুইড উৎপাদনের স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ডায়ালাইজার পরিষ্কার করে পুনরায় ব্যবহারের কোনো মেশিন সেখানে নেই। হাতেই তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে ফ্লুইড উৎপাদন করা হচ্ছে।

ফার্মাসিস্টদের মতে, জীবাণুযুক্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের ফ্লুইড ও ডায়ালাইজার পুনরায় ব্যবহার করার ফলেই রোগীদের এ দূরাবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
 
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা রোগী ও স্বজনদের এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও সমাধান করার কোনো উপায় দিতে পারেননি। তারা বলছেন, পিপিপি প্রকল্পটি সরাসরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও নির্ধারিত কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকে না।

কিডনি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা বলেন, সেন্ডরের অনিয়ম সম্পর্কে আমি অবগত। তাদের সঠিকভাবে কাজ করতে বলেছি। কিন্তু তারা চুক্তি অনুসারে গ্রাহ্য করে না।

তবে যোগাযোগ করা হলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেন্ডরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) এস এম আব্দুল সালাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনরা কি ডাক্তার? তারা এত কিছু বোঝে কিভাবে? তাদের কেউ ভুল বোঝাতেও পারে। আমাদের সার্ভিস সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুসারে হচ্ছে। ফ্লুইড উৎপাদনের জন্য আমরা আবার নতুন বড় জায়গা পাচ্ছি। সেখানে কাজ হবে। তবে এখন যেখানে আছে সেখানে জীবাণুযুক্ত হওয়ার কথা নয়।

১৫ থেকে ১৮ বার পর্যন্ত একই ডায়ালাইজার পরিশুদ্ধ করে ব্যবহার করা হয় বলে জানান সেন্ডরের প্রধান নির্বাহী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮
এমএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।