ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

'বেশি খাওয়া দারিদ্র্যের সংস্কৃতি'

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
'বেশি খাওয়া দারিদ্র্যের সংস্কৃতি' ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার আয়োজিত স্থূলতা বিষয়ক অনুষ্ঠানে অতিথিরা

ঢাকা: অতিরিক্ত আহার করা বা বেশি খাওয়াকে দারিদ্র্যের সংস্কৃতি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে বেশি খাওয়া দারিদ্র্যের সংস্কৃতি। দরিদ্ররা বেশি খায়।

তারা সচরাচর খেতে পায়না। যেদিন পায় সেদিন অতিরিক্ত আহার করে। এদিকে বড় লোকেরা এক সময় টের পেয়ে যায়। তারা খাওয়ায় আতঙ্ক বোধ করে। কিন্তু আমরা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে দারিদ্র্য। আর আমরা পেয়ে গেছি ফাস্টফুড। তাই আমাদের এ অবস্থা। বর্তমানে ডায়েটের নামে যে সব আন্দোলন চলছে এগুলোর অর্থ হলো- তোমরা বড়লোক হচ্ছো, তাই বেশি খেও না।  

শনিবার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্থূলতা সম্পর্কিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ।  

'ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, জীবনের একটা ভারসাম্য থাকা দরকার। ঠিক জীবনটা যেমনি হওয়া উচিৎ তেমনি। ছেলেবেলায় আমরা পড়েছিলাম ১ বর্গমিটার জায়গার উপর বাতাসের চাপ ১০ টন। তখন ভাবতাম আমরা কি করে দাঁড়িয়ে আছি। পরে জানলাম যে, শরীরের ভেতর থেকেও একটা বাতাসের চাপ রয়েছে। অর্থাৎ ভারসাম্য রয়েছে। এ ভারসাম্য মানুষের মধ্যে যত বেশি থাকে সেই মানুষ তত বেশি সুদর্শন বা সুদর্শনা। অধ্যাপক ইব্রাহীম সাহেব আমাকে একবার বলেছিলেন, আকাশ দিয়ে যে প্লেনটা উড়ে যায় সেটাতে কোন ছিদ্র থাকলে তা পড়ে যাবে। ভারসাম্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। কোনো কোনো ধর্মেও বলা হয়, ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ভারসাম্য। কেননা মহাকাশ পুরোটা রয়েছে ভারসাম্যে। পুষ্টিবিদ্যার চেষ্টা হলো মানুষের শরীরে এ ভারসাম্য রক্ষা করা।  

এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাকে অনেক জিজ্ঞাসা করে আমরা কি রিসার্চ করি নাকি? আমি বলি আমরা রিসার্চ করি না, সার্চ করি। চোখ খোলা রাখি বা সচেতন থাকি। সারাদেশের সবার মধ্যে এ সচেতনতা আনতে হবে। চিকিৎসার চাইতে মানুষকে জাগিয়ে তোলাই হবে শ্রেষ্ঠ কাজ। তাই আমি সবাইকে বই পড়াতে চাই। ছোটবেলায় আমি অনেক খেতাম। আমার স্বাস্থ্য অনেক ভালো ছিল। শিশুকালে দিনে আমি ১৮ বোতল দুধ খেতাম। যে কারণে মানব থেকে দানবে পরিণত হলাম। তবে আমার যৌবনে আমি সবসময় স্লিম ছিলাম।  

সরকার আমাদের দেশে একটি জড় পাথর উল্লেখ করে তিনি বলেন,  'সরকার কখনও নড়তে পারে না। সরকার কোথাও অবস্থান করলে আর নড়ে না। সরকার নিচের দিকে তাকিয়ে ফাইল দেখে শুধু। সরকারের সামনে আপনি দাঁড়িয়ে থাকলে আধ ঘণ্টা পর আপনাকে হয়তো বলবে, কি চাই? বা কি দেবেন? কি নেবেন তা কখনও বলবে না। আবার দেওয়া নেওয়া ছাড়া তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সরকারি কর্মকর্তা এদেশে কখনও বলে না যে আপনাকে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি। তারা ভাবে- দেশের উন্নতি হবে, আমার কি উন্নতি হবে। তাদের মধ্যে আমিত্ব বেশি। এ পরিস্থিতি অনেক আগে থেকেই। তাই সরকার যা খুশি তাই করুক। আমরা আমাদের মত সচেতনভাবে কাজ করি। তাই স্থূলতায় পরিণত হওয়া বন্ধ করি।  

এ সময় তিনি ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের পক্ষে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রথম পর্যায়ে ঢাকা শহরে '২০২০ সালের মধ্যে ২ লাখ কেজি ওজন কমানোর উদ্যোগে'র কথা ঘোষণা করেন।  

ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের উপদেষ্টা আবিদ আজাদের সভাপতিত্বে ও অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. এস কে রায়, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহীন আহমেদ, ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার সহ আগত পুষ্টিবিদরা।  

সৈয়দা শারমিন আক্তার স্থূলতা অতিরিক্ত ওজন জনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত আমরা একজন মানুষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি ওজন কমিয়েছি। এ পর্যন্ত আমরা আমাদের কাছে আগত মানুষদের মধ্যে ৮৪ ভাগ ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ যদি শুধুমাত্র ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমায় তাহলে সমস্যা দেখা দেয়। তার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়, গাল ভেঙে পড়া সহ আরো অনেক। আবার ডায়েটে থাকলে আমাদের সামাজিক পরিস্থিতির কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে। কারণ তখন সবাই তাকে নিয়ে মজা করতে শুরু করে। আরে ডিপ্রেশনের কারণে খাবার গ্রহণ করার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে সমস্যা আরো বাড়ে। তাই আমরা কাউন্সেলিং করি রোগীর সঠিক অবস্থা বোঝার জন্য। বিশেষ করে আমরা বলি খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা চর্বি বার্ন করুন। তাহলে আর সমস্যা থাকবে না।  

অনুষ্ঠানে ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের পরিচালিত প্রশিক্ষণের ৪০তম ব্যাচের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সৈয়দা শারমিন আক্তারের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে বিশ্বে স্থূলতা মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ছোট থেকে দেখব সবার মধ্যে এর প্রসার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বের প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত ওজন অবস্থান করছে। প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় স্থূলতায় ভুগছে।  

তাছাড়া, ঢাকা শহরের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভুগছে। এছাড়া  ৪৬ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত ওজনে রয়েছে। আবার চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত ওজন এ ও ২৩ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভুগছেন। ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের করা অনলাইন জরিপ মতে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
এমএএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।