মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিএসএমএমইউ সাব-স্পেশালিটিগুলোর (এমডি/এমএস) ডিগ্রি দেবে।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এফসিপিএস বা বিসিপিএস প্রদত্ত ফেলোশিপধারী চিকিৎসকরা আন্দোলনে নামেন। তারা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করেন। এসব সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সরে আসার দাবি করা হয়েছে। তা না মানা হলে আরও তীব্র আন্দোলনে যাবে বলে হুমকি দিয়েছেন তারা।
এর আগে বাংলানিউজকে বিসিপিএস সভাপতি ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ২০১১ সাল থেকে দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যেসব ডিগ্রি চালু আছে, সেগুলো সমন্বয় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী আবার একই নির্দেশনা দিলে এ বিষয়ে নতুন কমিটি করা হয়। সেই কমিটি যাচাই-বাছাই করছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দেশে যেসব ডিগ্রি আছে, তা অবশ্যই সমন্বয় প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা কেনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, তা বুঝতে পারছি না। তবে যা-ই করা হোক না কেনো সবার সম্মতিক্রমে সব করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এমন সিদ্ধান্তে আসার পর মেডিকেল অফিসারদের এমন দাবি অযৌক্তিক বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের মতে, বিসিপিএস থেকে কোনো ডিগ্রি দেওয়া হয় না। সেটা ফেলোশিপ মাত্র। অতএব এ সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়, আমরাও তার সৈনিক। আমরা এ নির্দেশকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে বিসিপিএস থেকে ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে এমনকি স্বাক্ষর করেও মেডিকেল অফিসারদের ভুল বুঝিয়েছেন। এতে তারা আন্দোলনে আসতে উৎসাহিত হচ্ছেন ও করছেন।
ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, এফসিপিএস ডিগ্রিটি সারাবিশ্বের শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চালু আছে। অথচ সারাবিশ্বের অন্যান্য দেশে এমডি, এমএস ডিগ্রি চালু আছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব সার্জন থেকে বলা হয়েছে- এফআরসিপি, এফআরসিএসও কোনো ডিগ্রি নয়, ফেলোশিপ মাত্র। আর আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পাকিস্তানের নিয়ম-নীতি মেনে চলার মাধ্যমে কিছু অপশক্তি এভাবে ডিগ্রির সমন্বয় করার নামে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা রোধ তথা জীবন ধংসের পাঁয়তারা করছে। এটাকেই আমি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বলতে চাই।
এদিকে, এফসিপিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আজ সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উঠানো হয়। সেখানে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সদস্যরা বর্তমানে যেভাবে চিকিৎসা শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রি দিচ্ছেন, সেভাবে রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে। এই মিটিং চলাকালীন সময়ে বাইরে অবস্থানরত চাকরি প্রার্থীদেরকে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরিতে যোগদানের দাবি জানাতে শোনা গেছে। এ সময় তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা রাজি হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে প্রায় চার শতাধিক চাকরি প্রত্যাশী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। পরে দুপুর ২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্লকে যান এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। সে সময় থেকেই তাদের আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে ও সময়-অসময় উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রেখে চলমান রয়েছে। সেই সূত্রে বা একই দাবিতে এখনও তাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। যা রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভা চলমান থাকা অবস্থায় দেখা গেছে।
চিকিৎসকদের নিয়োগ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বাংলানিউজিকে বলেন, চাকরি প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। তাই তাদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফেব্রুয়ারিজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা রয়েছে। তাই এ মাসে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। ১৫ মার্চ আমরা বুয়েটের হল পেয়েছি, ওইদিন চিকিৎসক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন>> উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চিকিৎসকদের দ্বিধা-বিভক্তি
নিয়োগ স্থগিতের প্রতিবাদে বিএসএমএমইউ অবরুদ্ধ
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
এমএএম/টিএ