ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নতুন-পুরানো রোগীর ভিড় বাড়ছে সোহরাওয়ার্দীতে

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯
নতুন-পুরানো রোগীর ভিড় বাড়ছে সোহরাওয়ার্দীতে হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তির তথ্য নেওয়া হচ্ছে, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: অগ্নিকাণ্ডের পর আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে ১৫টি ওয়ার্ড। সেইসঙ্গে আগুনের সময় সরিয়ে নেওয়া ৭০০ রোগীও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফেরত আনা হয়েছে। পাশাপাশি বড় ধরনের বিপদের মুখ থেকে ফেরা হাসপাতালটিতে নতুন রোগীর স্বাভাবিক ভিড়ও বাড়ছে। তবে রোগীদের মনে যে আতঙ্ক ঢুকেছিল, তা পুরোপুরি কাটেনি এখনও।

আগুনের সময় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকা ১০ রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয়জনকেও আবার হাসপাতালটির আইসিইউতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সব মিলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এ হাসপাতালটির বর্তমান কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।

শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, রোগীর ভিড় বাড়তে শুরু করেছে হাসপাতালটিতে। এর শিশু ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ১৫টি ওয়ার্ড পুরোদমে চালু হয়েছে। তবে শিশু ওয়ার্ডের একাংশ চালু এবং গাইনী ওয়ার্ডের বেশিরভাগই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পুড়ে যাওয়া অংশের মেরামতের কাজ চলার কারণে বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরিয়ে নেওয়া রোগী ছাড়াও নতুন রোগী আসছে এখানে। তবে নতুন রোগীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাসপাতালের তিনতলা ভবনের প্রায় অংশই আগুনে পুড়ে যাওয়ায়, কালো ছাপ দেখে রোগীরা আতঙ্কে পড়ছেন। গাইনী ও শিশু ওয়ার্ডের কিছু অংশ একেবারে ধংসস্তুপে পরিণত হয়ে আছে এখনও। চলছে মেরামতের কাজ।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আলতাফ হোসেন এসেছেন তার মেয়েকে নিয়ে। তখন বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাসা থেকে এ হাসপাতালে আসতে সবাই না করছিল। ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণে ভয় সৃষ্টি হয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম হাসপাতাল চালু হয়েছে, তাই এসেছি। ভিড় আগের মতো নেই। তাই দ্রুত ডাক্তার দেখাতে পারবো বলে আশা করছি। তবে মনে একটা আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।

দোতালায় গাইনী ওয়ার্ডের সামনে বারান্দায় বিছানা পেতে রয়েছেন বেশ কয়েক নারী। যারা অগ্নিকাণ্ডের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ফিরে এসেছেন সোহরাওয়ার্দীতে। এদের মধ্যে রিনা ইয়াসমিন নামে একজন বাংলানিউজকে বলেন, ওইদিন (আগুন লাগার দিন) আমার গলার অপারেশন হয়েছিল। দুপুর ১টার দিকে অপারেশন শেষ হওয়ার পর ওয়ার্ডে ফিরে আসি। বিকেলে (অগ্নিকাণ্ডের) দেখি চারদিক ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেছে। আমি ভয়ে নিজেই নিচে নেমে গেছি। যদিও শরীরের অবস্থা ভালো ছিল না। এরপর সামনে যেতেই লোকজন ধরে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে ঢামেকে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে একদিন বারান্দায় কষ্টে ছিলাম। গতকাল ফিরে এসেছি। ওয়ার্ডে ধোয়া-মোছার কাজ চলছে, সন্ধ্যার পর আবার বেড পাবো। তাছাড়া আমি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগে ভর্তি হয়েছিলাম।

১৫দিন ধরে এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত জাহানারা বেগম। তিনিও ঢামেক থেকে গতকাল ফিরেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতলে আসার পর থেকেই উপরে ছাদের দিকে তাকালেই ভয় লাগছে। ছাদ পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এখনও পোড়া গন্ধ রয়েছে পুরো হাসপাতালজুড়ে। তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি হচ্ছে না। শুধু ওইদিনের ঘটনা মনে পড়লেই ভয় লাগছে।

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের দিন রোগী উদ্ধার করতে গিয়ে মুখ ঝলসে গেছে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জাকির হোসেনের। তার মুখে আগুনে হালকা করে পুড়ে যাওয়া কালো দাগ লক্ষ্য করা গেছে। সে দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অগুন লাগার পর শুরু থেকেই রোগীদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিলাম। একবার মাঠ থেকে ফিরে এসে ১২ নম্বর (৩য় তলা) ওয়ার্ডের দিকে গেলে আগুনের আঁচ এসে লাগে আমার মুখে। সে সময় রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রোগীদের বের করার কাজ করছিলাম। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎ একজন নারী এসে বললেন, তার বাচ্চা শিশু ওয়ার্ডে রয়েছে। সেই নারীকে আটকে রেখে আমি শিশু ওয়ার্ডে আগুনের মধ্যে গিয়ে ডাকাডাকি করে দেখি কেউ নেই। তখন আগুনের আঁচ আরও বেশি করে লাগে আমার মুখে ও গলায়। জায়গায় জায়গায় পুড়ে কালো কালো হয়ে গেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খাচ্ছি ও ক্রিম লাগাতে হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীদের স্বাভাবিক ভিড়, ছবি: বাংলানিউজসেদিন অপারেশন থিয়েটারে থাকা চিকিৎসক ডা. নূর আহমেদ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, আগুনের খবর যখন পেলাম, তখন আমি দোতলায় অপারেশন থিয়েটারে। সেখানে গুরুতর কোনো অপারেশন হচ্ছিল না। তাই রোগীদের দ্রুত সরিয়ে দিতে সক্ষম হই।

সামগ্রিক বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৮৫০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০০ জন বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আবার ফিরে এসেছেন। যাদের অগ্নিকাণ্ডের দিন স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এছাড়া আউটডোর খোলা রয়েছে। মোট ১৫টি ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালে ওইদিন রোগী ছিলেন এক হাজার ১৭৪ জন। গতকাল শুক্রবার হলেও আমরা হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক-নার্স, এমনকি ইন্টার্নির শিক্ষার্থীরাও কাজ করেছেন। বর্তমানে শুধুমাত্র একটি ওয়ার্ড বন্ধ আছে। সেটা হলো শিশু ওয়ার্ড। সেখানে এখনও পোড়া গন্ধ রয়েছে। যেটা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হবে বলেই বন্ধ রাখা হয়েছে।

আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আগুন মূলত নিচের স্তরের পাশে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপকের রুম থেকে সূত্রপাত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ওই রুমেই শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে এবং আগুন সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া রুমটি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। পাশের রুমে স্টোরে ওষুধ থাকায় আগুনটি বড় হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে। এছাড়াও আমাদের নয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই দুই কমিটি রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রিপোর্ট জমা দিলে সব বিষয়ে খোলাসা করে বলা যাবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নতুন ভবনে আগুন লাগে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলে রোগীদের দ্রুত সরিয়ে নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯
এমএএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।