ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

দেশের ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
দেশের ২ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত প্রতীকী ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে কিডনি রোগ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন মতে, এর মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যারা এক সময় সম্পূর্ণ কিডনি বিকল পর্যায়ে উপনীত হয়। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ব্যতীত আর কোনো উপায় থাকে না৷ কিন্তু এ দু’টো পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে।

রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, পৃথিবীতে বর্তমানে ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ কিডনি রোগে ভুগছে। প্রতি বছর ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ আকস্মিক কিডনি রোগে মারা যায়।

বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগের প্ৰকোপ দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি প্ৰদাহ, মূত্র সংক্রমণ ও মূত্র প্রতিবন্ধকতা অন্যতম। এছাড়া দারিদ্র, লিঙ্গ বৈষম্য, অশিক্ষা, কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা, বায়ু, পানি ও খাদ্য দূষণ সর্বোপরি অসচেতনতা কিডনি রোগ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই মানসম্মত কিডনি রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এর কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব।

সংগঠনটির এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, দেশে প্রতিবছর ২৫ হাজার রোগীর ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, প্রসবকালীন জটিলতা, ম্যালেরিয়া ও বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করেই কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব।  

এ সমস্যা সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল আলম বলেন, পানিশূন্যতার জন্য যথাসময়ে স্যালাইন দিতে হবে, রক্তক্ষরণ হলে অতি দ্রুত রক্ত দিতে হবে, ইনফেকশন হলে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। তাছাড়া আকস্মিক কিডনি রোগ শুরুতে প্রতিরোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে তা ক্রনিক কিডনি ডিজিজে রূপান্তরিত হয়। যার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার রোগীর কিডনি প্রায় একেবারেই অকেজো হয়ে যাচ্ছে। আর বিভিন্ন কারণে দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব কিডনি দিবস। এবারের বিশ্ব কিডনি দিবসের প্ৰতিপাদ্য ‘সুস্থ কিডনী, সবার জন্য-সর্বত্র’।  

সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কিডনী রোগ বিষয়ে সচেতনতা অর্জনের লক্ষ্যে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন কিডনি রোগের সব সেবা রয়েছে। দেশে বর্তমানে ডায়ালাইসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন সফলভাবে হচ্ছে। কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে এবং এর হার দিনে দিনে বাড়ছে। সময়মতো প্রতিরোধের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা দেওয়া হলে কিডনি রোগের মৃত্যুহার অনেকাংশেই কমে যাবে। মূলত গ্রাম বা শহরতলীতে কিডনি বিশেষজ্ঞ থাকলে এর মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে বিএসএমএমইউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির কাজ করে যাচ্ছে।  

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা.  হারুন-আর-রশিদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএসএমএমইউ নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কেবিএম হাদিউজ্জামান প্রমুখ।

এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।  

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ১৩০-এর বেশি ডায়ালাইসিস সেন্টার প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার রোগী ডায়ালাইসিস করছে। বিপুল কিডনি রোগীর তুলনায় এ সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। তাই এই সুযোগ অনতিবিলম্বে বাড়ানো প্রয়োজন। যদিও সরকারি হাসপাতালের নামমাত্র মূল্যে ডায়ালাইসিস দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে আমাদের দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য রয়েছে ১৭০ জন কিডনী বিশেষজ্ঞ এবং ২৫ জন ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও ডায়ালাইসিস নার্স ৩০০ জন। প্রত্যেক বিশেষজ্ঞকে সেই হিসাবে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী দেখতে হয়। এ কারণে প্রত্যেক মেডিকেল কলেজে নেফ্রোলজি বিভাগ খোলা এবং নেফ্রোলজিসস্টের পদ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার সারাদেশে বিশেষায়িত কিডনি হাসপাতাল তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা অত্যন্ত যুগোপযোগী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
এমএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad