ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

আদিতমারী হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসকও প্রশিক্ষণে

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৯
আদিতমারী হাসপাতালের একমাত্র চিকিৎসকও প্রশিক্ষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

লালমনিরহাট: স্বাস্থ্যসেবার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মানুষ। তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মেডিকেল অফিসারও রয়েছেন প্রশিক্ষণে।

জানা গেছে, লালমনিরহাট ২ আসনের একাংশ আদিতমারী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে গড়ে ওঠে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।  

নবম সংসদ নির্বাচনের পর  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়।

যেখানে অপারেশন থেকে শুরু করে সব ধরনের চিকিৎসার উপকরণ সরবরাহ  করা হয়। ভবন নির্মাণ হলেও ৫০ শয্যা তো দূরের কথা ৩১ শয্যার জনবলও নেই। জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি রুগ্ন হয়ে পড়েছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ।
 বন্ধ এক্সরে রুম
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যার জনবল অনুযায়ী জুনিয়র কনসালটেন্টের ৫টি পদই শুন্য। মেডিকেল অফিসার ১০টি পদের ৮টি শুন্য, একজন প্রেষণে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। একমাত্র চিকিৎসক ডা. শাহিদা সুলতানা সুচি গত তিন দিন ধরে ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। স্যাকমো ১০টি পদের ৬টি শুন্য, একজন বরখাস্ত। মাত্র তিনজন স্যাকমো দিয়ে চলছে পুরো উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা। টেকনিশিয়ানের দু'টি পদই শুন্য থাকায় প্যাথলজি বিভাগে ঝুলছে তালা। এক্স-রে মেশিন দেড় যুগ ধরে বিকল।  

কমলাবাড়ির চড়িতাবাড়ি গ্রাম থেকে আসা বৃদ্ধা সহিরন বাংলানিউজকে জানান, কোমরের ব্যথার চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চিকিৎসকের দেখা পেয়েছেন। ওষুধ লিখে দিলেও ভিড়ের চাপে চিকিৎসকের কথা ভাল করে শুনতে পাননি বলেও জানান তিনি।

গোবর্দ্ধন চর থেকে আসা আব্দুল আজিত ক্ষোভ ঝেড়ে বাংলানিউজকে বলেন, ভাল করে না শুনেই ঘস ঘস করে ডাক্তার ওষুধ লিখে দিলেন। এত ভিড়ে কি আর শরীরের সমস্যার কথা বলা যায়? । এটা নামের হাসপাতাল। এর চেয়ে গ্রামের ডাক্তাররাও তো ভাল করে দেখে শুনে ওষুধ দেন।  

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮ নম্বর কক্ষে রোগীর প্রচণ্ড ভিড়। তীঁল ধারনের জায়গাটুকু নেই। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) সালাম শেখ রোগী দেখছেন। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে জানান, দৈনিক প্রায় দেড়/দুইশ’ রোগী আসে বহিঃবিভাগে। তাদের চিকিৎসা দিতে হাফিয়ে উঠতে হয়। মেডিকেল অফিসার না থাকায় অন্তঃবিভাগেও রোগী দেখতে হচ্ছে। দুই বিভাগে ছোটাছুটি করে রোগী দেখছেন তিন স্যাকমো।
রোগী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেশকাতুল আবেদ বাংলানিউজকে জানান, জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। সান্ত্বনা চিকিৎসা সচল রাখতে জরুরি ভিত্তিতে প্রেষণে কয়েকজন স্যাকমো চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাশেম আলী বাংলানিউজকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে ৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে জনবল পুরণ করে অপারেশন কক্ষটিও চালু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।